ঢাবি ছাত্রীকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণকারীর কোমরে ছিল পিস্তল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীকে কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় সামনে এসেছে নতুন তথ্য। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, অপহরণকারী ব্যক্তি লাল হেলমেট ও খয়েরি রঙের জামা পরে ছিলেন। এ ছাড়া তার কোমরে ছিল পিস্তল। একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে মোবাইল ফোন রিচার্জের দোকানে ঢোকেন ছাত্রী। এরপর বের হলে তাঁকে অনুসরণ করছিলেন অপহরণকারী। রিকশা নিয়ে ছাত্রী বাসার উদ্দেশে যাওয়ার সময় তাঁর গতিরোধ করেন ওই ব্যক্তি। এ সময় তরুণীর হাতে ছিল কয়েকটি ব্যাগ ও পুতুল। জন্মদিন উপলক্ষে এসব উপহার দিয়েছিলেন বন্ধুরা।
ফুটেজ ও তদন্তে উঠে আসে, ব্যাগ দেখিয়ে অবৈধ জিনিসপত্র আছে বলে ফাঁদ পাতেন ওই দুর্বৃত্ত। তাঁর সঙ্গে ওই ছাত্রী প্রায় সাত মিনিট তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলা হয়, ‘থানায় মুচলেকা দিতে হবে। সেখানে ব্যাগ খোলা হবে। বন্ধুরা অবৈধ জিনিসপত্র দিয়েছেন আপনাকে।’
তখন ছাত্রী বলছিলেন, এসব জন্মদিনের উপহার। তখন অপহরণকারী বলছিলেন, 'ক্যাডিবিয়ারের ভেতরে অবৈধ জিনিস আছে। থানায় ক্যাডিবিয়ার কেটে ওই অবৈধ জিনিস বের করা হবে।’ তখন রিকশাচালক বলছিলেন, ‘আপা, পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা মেটান। আমাকে ছেড়ে দেন।' এরপরই পুলিশের স্টিকার লাগানো সেই মোটরসাইকেলে উঠে বসেন ঢাবি ছাত্রী।
এক কর্মকর্তা জানান, ক্যাডিবিয়ারের ভেতরে অবৈধ জিনিস রয়েছে বলার পর ভড়কে যান ছাত্রী। পোশাক-পরিচ্ছদ পুলিশের মতো, কোমরে পিস্তল ও পুলিশ লেখা গাড়ি দেখে বিশ্বাসও করেছিলেন পুলিশ বলে। অপহরণকারীর পরনে ছিল শার্ট-প্যান্ট। তদন্তের তথ্যে অনুযায়ী, অপহরণকারী পেশাদার অপরাধী। পুলিশ পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।
কল্যাণপুরের আগে বরিশালেও একটি ঘটনা ঘটান। যেসব মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন তার নম্বর প্লেটও ভুয়া। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও কারাভোগের তথ্য মিলেছে। তাঁর কোনও সহযোগী আছেন কিনা, গোয়েন্দারা তা জানার চেষ্টা করছেন।
আরো পড়ুন: ‘পুলিশ পরিচয়ে ঢাবি ছাত্রীকে তুলে নেওয়া ব্যক্তিকে খুঁজছে ডিবি’
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, নিজের মোটরসাইকেল বা ভাড়ার মোটরসাইকেল নিয়ে নারীদের অপহরণ করেন তিনি। প্রতিটি ঘটনায় অপহরণের পাশাপাশি নারীদের হেনস্তা করেন তিনি। এক ধরনের বিকৃত মানসিকতার দুর্র্ধষ অপরাধী অপহরণকারী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, অপহরণকারীকে ধরতে জাল পাতা হয়েছে। তাঁকে শনাক্তও করা গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। সিসিটিভির ফুটেজও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগে বলা হয়, গত ২৫ আগস্ট দুপুর দেড়টায় তিনি কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশাযোগে বাসায় যাচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তি তার গতিরোধ করে নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে দাঁড়াতে বলেন। পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির মোটরসাইকেলের সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল। গতিরোধ করে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ভুক্তভোগীকে বলেন, আপনার সঙ্গে থাকা ব্যাগে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে, আপনাকে থানায় যেতে হবে।
এ অবস্থায় পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির বক্তব্যে বিব্রত হয়ে তার মোটরসাইকেল ওঠেন ভুক্তভোগী। শিক্ষার্থীকে মোটরসাইকেলে তুলেই দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকেন ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে দিয়াবাড়ির নির্জন এলাকায় নিয়ে ছুরিকাঘাতের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন এবং কানের দুল ছিনিয়ে নেন। ভুক্তভোগীর স্বর্ণালঙ্কার লুট করার সময় পাশ দিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন।
ভুক্তভোগীর সঙ্গে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে তিনি এগিয়ে যান। স্থানীয় ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে দেখে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ভিকটিমের স্বর্ণালঙ্কার ও ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় ওই ব্যক্তি বিষয়টি তুরাগ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশের একটি দল ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। ওই দিনই তুরাগ থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন অপহরণের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী।