থানায় আসামির মৃত্যু: পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না করে লাশ নেবে না পরিবার

হাতিরঝিল থানা
হাতিরঝিল থানা  © ফাইল ছবি

রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় সুমন শেখ নামে এক আসামির আত্মহত্যার ঘটনার পর এখনো লাশ গ্রহণ করেনি মৃতের পরিবার। পুলিশের বিরুদ্ধে  মামলা না করে তারা লাশ নেবে না বলে জানিয়েছে। পুলিশ গতকাল (শনিবার) রাতে মরদেহ নিতে বললেও পরিবার তা করেনি।

সুমন শেখের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুমন শেখের কেন মৃত্যু হলো, এর আসল কারণ তারা জানতে চান। তাই তারা এভাবে সুমন শেখের লাশ নিয়ে যাবেন না। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনেই তারা লাশ নেবেন। আইনি প্রক্রিয়া কি কি রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করার জন্য নিহত সুমনের স্ত্রী আদালতে গেছেন। সেখানে আইনজীবীদের পরামর্শে আদালতে মামলা করতে পারেন তিনি। তারপর হয়ত আজ বিকেলের দিকে সুমন শেখের লাশ পরিবার গ্রহণ করবে। রবিবার (২১ আগস্ট) সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুমন শেখের বেয়াই মো. সোহেল আহমেদ।

তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সুমনের লাশ চুপিচুপি নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ আমাদের জানিয়েছিল। কিন্তু আমরা তা গ্রহণ করেনি। আজ সকালে সুমনের স্ত্রী আদালতে গেছেন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে যে, এ ক্ষেত্রে পরিবারের পক্ষ থেকে কি কি আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া তিনি জানার চেষ্টা করবেন, পরিবার যদি এভাবে লাশ গ্রহণ করে তাহলে সুমন শেখের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাবে কি না।

পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলেন, সুমনের স্ত্রীকে যদি আইনজীবীরা পরামর্শ দেন মামলা করার জন্য, তাহলে তিনি করবেন। এক্ষেত্রে ইউনিলিভার লিমিটেড বাংলাদেশ ও পুলিশের বিরুদ্ধে একটি মামলা করতে পারেন। আদালতে মামলা করার পরই আজ বিকেলের দিকে হয়ত সুমনের লাশ দাফনের জন্য গ্রহণ করা হতে পারে।

আরও পড়ুন: মেয়ের ধর্ষণ চেষ্টার বিচার চাইতে গিয়ে থানায় মার খেলেন বাবা

এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক বলেন, ময়নাতদন্ত শেষ হলে আমরা পরিবারের লোকজনকে ডাকব। তারা লাশ শনাক্ত করে নিয়ে যাবে।

পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া তারা লাশ নেবে না এবং গত রাতে পুলিশ তাদের মরদেহ দিতে চেয়েছিল কিন্তু তারা নেয়নি— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর পরিবারকে লাশ দিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া এখানে আর কোনো আইনি প্রক্রিয়া নেই।

এদিকে সুমনের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করতে তিন সদস্যদের কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। শনিবার রাতে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হাতিরঝিল থানায় সুমন শেখ নামে এক আসামির আত্মহত্যার ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) রাতে দায়িত্ব থাকা ডিউটি অফিসার হেমায়েত হোসেন ও সেন্ট্রি মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আজিমুল হক বলেন, ইউনিলিভার লিমিটেডের পিউরইটে চাকরি করতেন সুমন শেখ। পিউরইট অফিসের ৫৩ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট একটি মামলা হয়। এ ঘটনায় তিন জনকের গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। গ্রেপ্তাররা হলেন— আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন। পরে এই তিন জনের দেওয়া তথ্য ও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চুরির সঙ্গে সুমন শেখের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে তাকে শুক্রবার বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর সুমন শেখকে নিয়ে রাতে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭শ টাকা জব্দ করা হয়।

সুমনের শেখের আত্মহত্যার বর্ণনা দিয়ে ডিসি তেজগাঁও বলেন, অভিযান শেষে সুমন শেখকে রাতে হাতিরঝিল থানা রাখা হয়। শনিবার সকালে রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এই ফুটেজ নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ