মেয়ের ধর্ষণ চেষ্টার বিচার চাইতে গিয়ে থানায় মার খেলেন বাবা
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে শিশু কন্যাকে ধর্ষণ চেষ্টার বিচার চাইতে যাওয়া বাবাকে থানার ভেতর বেধড়ক মারপিটের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। শনিবার (২০ আগস্ট) রাতে শিবালয় থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত এএসআই আরিফ হোসেনকে রাতেই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মানিকগঞ্জের শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী।
ভুক্তভোগী ওই শিশুর বাবা জানান, স্ত্রীসহ তিনি ঢাকায় থাকেন। তার ৫ বছরের শিশু কন্যা থাকেন দাদির কাছে। গত ২০ জুলাই রজ্জব খান তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি হাতে নাতে ধরে ফেলে শিশুটির দাদি। পরে স্থানীয় গ্রাম্য মাতবরদের জানানো হলেও, প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন না। উল্টো তাকেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো।
এরপর গত ১৪ আগস্ট শিবালয় থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও থানা থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শনিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে মা ও শিশু কন্যাকে সাথে নিয়ে থানায় যান তিনি। এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুমে ছিলেন না।
থানায় আসার কারণ জানতে এগিয়ে আসেন এএসআই আরিফ হোসেন। তাকে পুরো ঘটনা জানান শিশুটির বাবা। কিন্তু আরিফ ঘটনাটি কিছুতেই বিশ্বাস করছিলেন না। কথা বার্তার এক পর্যায়ে শার্টের কলার ধরে তাকে একটি রুমে নিয়ে যান এএসআই আরিফ হোসেন।
আরও পড়ুন: কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের কক্ষে থাকেন পুরুষ শিক্ষক, প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন
বিচার প্রার্থী ওই বাবার অভিযোগ, রুমে নেয়ার পর তাকে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি লাথি মারাসহ লাঠি দিয়ে মারপিট করে। একপর্যায়ে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় বাইরে তার মা ও শিশু কন্যা কান্নাকাটি করলেও আরিফের হাত থেকে রক্ষায় থানার কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে আরিফ তাকে ফ্লোর থেকে তুলে বলে যা চলে যা। দৌড়ে চলে যাবি।
শিশুটির দাদি জানান, ছেলের সাথে নাতনিকে কোলে নিয়ে তিনিও থানায় গিয়েছিলেন। এএসআই আরিফ যখন তার ছেলেকে টেনে রুমে নিয়ে মারপিট করে। তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্যের হাত পা ধরে তিনি কান্নাকাটি করেছেন কিন্তু কেউ তার ছেলেকে উদ্ধার করেনি। এ সময় তার শিশু নাতনিও কান্না কাটি করেছেন। অনেক ভয় পেয়েছে সে। পরে ছেলেকে উদ্ধার করে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
তার পা, হাত ও মাথার বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একজন বিচার প্রার্থীর সাথে পুলিশ সদস্যের এমন আচরণের বিষয়টি জানাতে রাতেই মা ও শিশু কন্যাকে সাথে নিয়ে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যান শিশুটির বাবা।
শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী জানান, ঘটনা জানার পর অভিযুক্ত এএসআই আরিফ হোসেনকে রাতেই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য সুপারিশ করা হবে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার আসামিকেও গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।