২৮ জুলাই ২০২২, ১৯:২০

ঘুম ভাঙতেই দেখি হাঁটুর ওপরে হাত, পুরো বাস খালি

প্রতীকী  © সংগৃহীত

রাজধানীতে বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থেকে লাফ দিয়ে নেমে নিপীড়কের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেছেন এক ভর্তিচ্ছু। ওই নারী শিক্ষার্থী তার অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে লিখেছেন। তার ওই ফেসবুক পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে। ঘটনায় জড়িত বাসচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেদিনের ঘটনার ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

ভুক্তভোগী ভর্তিচ্ছু পড়াশোনার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করেন। কাজ শেষ করে আজিমপুরের বাসায় ফিরছিলেন। গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে ধানমন্ডি থেকে বাসে উঠেছিলেন তিনি। বাসে যখন ওঠেন তখন অনেক যাত্রী ছিল। তিনি বাসের মাঝামাঝি একটি সিটে বসেছিলেন। সারা দিনের ধকল ও যানজটের জন্য বাসে চড়ে বাইরের আওয়াজ থেকে রেহাই পেতে তিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে বেশ জোরে গান শোনেন।

ঘটনার রাতেও তাই করছিলেন। আর খানিকটা ঝিমুনির মতোও চলে এসেছিল। তাই বাসের ভেতরে কী হচ্ছে, তা তিনি খেয়াল করেননি। বাসের সহকারী একবার ভাড়া নিতে এলে তিনি ভাড়া দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, হুট করেই বুঝতে পারলাম আমার হাঁটুর ওপরে কারও হাতের স্পর্শ। সঙ্গে সঙ্গে তাকিয়ে দেখলাম, পুরো বাস খালি, আর আমার পাশে একজন বসা।

‘‘বাসের সব লাইট বন্ধ। তাকানোর পর সেই লোক (হেলপার) আর একটু ওপরে হাত দেয়। জোরে ধাক্কা দিয়ে সেই লোককে সিট থেকে নিচে ফেলে দিই। দাঁড়াতে দাঁড়াতে মুঠোফোনটাকে ব্যাগে ঢোকাই। চিৎকার করতে থাকি বাস থামানোর জন্য। কিন্তু চালক বা হেলপার কোনো কথা বলছে না।’’

আরও পড়ুন: চলন্ত বাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুকে যৌন নিপীড়ন, চালক গ্রেফতার

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, আমি সামনের দিকে আগাতে গেলে হেলপার দুই হাত দিয়ে আমার মুখ ও হাত চেপে ধরে। পা ও কনুই দিয়ে হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে থাকি। পা দিয়ে হেলপারের পায়ে জোরে আঘাত করি। হুট করে মনে হলো হেলপার যে হাত ধরে ছিল তা একটু আলগা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাসের জানালাগুলো কোন ফাঁকে বন্ধ করে দিয়েছে, খেয়াল করিনি। প্রথমে ভেবেছিলাম, দরজাতেও বোধ হয় সিটকিনি লাগানো। মনে মনেই চিন্তা করছি বাসের সিটকিনি যে কোথায় থাকে, তাও তো জানি না। তবে সামনের দিকে আসতে আসতে সড়কের গতিরোধকের জন্য বাসের গতিও খানিকটা কমাতে বাধ্য হয়েছিল চালক। যখন দেখলাম বাসের দরজায় সিটকিনি লাগানো নেই, কোনো কিছু চিন্তা না করে দরজা খুলে লাফ দিই। বাসে চড়ে অভ্যস্ত বলে তখন আর বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। নেমেই দৌড় দিলাম।

ওই শিক্ষার্থী জানান, বাস থেকে লাফ দিয়ে যে এলাকায় নেমেছিলেন, সে এলাকা দিনের বেলায়ও বেশ ফাঁকা থাকে। আর রাত নয়টা বেজে যাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো এলাকাই ছিল ফাঁকা। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে শুধু ভাবছি, আমার চিৎকার কেউ শুনতেও পেত না। আর তখন বাস থেকে কীভাবে লাফ দিয়েছিলাম, তা চিন্তা করলেও ভয় লাগছে।

এদিকে, এ ঘটনায় বুধবার রাতে আশুলিয়া থেকে মো. মাহবুবুর রহমান নামে ওই বাস চালককে গ্রেফতার করা হয়। বাসটিও জব্দ করা হয়েছে।

লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্রী এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছিলেন। তার বাসা আজিমপুরে। ২৪ জুলাই রাতে ধানমণ্ডি থেকে বাসায় যাওয়ার পথে বাসে নিপীড়নের শিকার হন তিনি। ফেসবুকে ঘটনাটি প্রকাশ করেন ওই ছাত্রী।