ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর রহস্যজনক মৃত্যু

মেয়ের সঙ্গে রেহনুমা ফেরদৌস
মেয়ের সঙ্গে রেহনুমা ফেরদৌস  © সংগৃহীত

‘কথার আঘাত ছুরির চেয়েও ধারালো’ নিজের ফেসবুক আইডিতে এমন স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন রেহনুমা ফেরদৌস (২৫)। মৃত্যুর মাত্র ১৮ ঘণ্টা আগে এমন স্ট্যাটাস দেন তিনি। রেহনুমা নিজেদের পারিবারিক ফেসবুক গ্রুপেও লিখেছেন- ‘সবার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সবাইকে খুব মিস করছি।’ আর কষ্টের এই লেখালেখির পরই এলো তার মৃত্যুর খবর। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর (সরাইপাড়া) ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পুত্রবধূ রেহনুমা। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। রেহনুমার এ মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবার দাবি করছে, রেহনুমা আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু রেহনুমার  পিতা দাবি করেছেন- রেহনুমাকে অত্যাচার-নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউন্সিলরের পুত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফ্লোরে শোয়া অবস্থায়। তবে তার গলায় দাগ ছিল। 

রেহনুমা চসিকের আলকরণ ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা তারেক সোলেমান সেলিমের ভাই তারেক ইমতিয়াজের মেয়ে। রেহনুমার ২ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। রেহনুমাকে পারিবারিক নানা অজুহাতে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই  নির্যাতন করে আসছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন- এমন অভিযোগ রয়েছে।  

পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবারের পক্ষ থেকে পুত্রবধূ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।  এরপর পাহাড়তলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রেহমুনার লাশ উদ্ধার করে। লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল না। ফ্লোরে শোয়ানো অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে  পাঠানো হয়।

২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে রেহনুমার বিয়ে হয়েছিল কাউন্সিলর নুরুল আমিনের ছেলে ব্যাংকার নওশাদুল আমিনের সঙ্গে।

পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রেহনুমাকে মানসিক নির্যাতন করে আসছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যেও টানাপোড়ন চলতে থাকে। রেহনুমা ও নওশাদের মধ্যেও দাম্পত্য কলহ চলতে থাকে। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু এরপরও দিন দিন সমস্যা প্রকট হতে থাকে। 

রেহনুমার পরিবারের একজন সদস্য যুগান্তরকে জানান, ‘বাপের বাড়ি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে শ্বশুরবাড়িতে গেলে তাদের (শ্বশুরবাড়ির) লোকজন বলত- ফকিন্নির মেয়ে তাদের একটি গাড়িও নেই। আমাদের কয়টা গাড়ি আছে দেখ।’

রেহনুমার পিতা তারেক ইমতিয়াজ যুগান্তরকে বলেন, আমার পরিবারে একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। সে গ্রুপে লিখেছে- সবার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সে সবাইকে মিস করছে। এর কিছুক্ষণ পর মৃত্যুর খবর পাই। তার লাশ পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় পায়নি। গলায় দাগ ছিল, লাশের হাতের মুঠোতে কিছু চুলও ছিল। মনে হচ্ছে নির্যাতন করেই হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছি। আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

পাহাড়তলী থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে নিচে বিছানায় নামানো অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

ওসি বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন অভিযোগ করছে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। মেয়েটির বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে বিকেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আমিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।


সর্বশেষ সংবাদ