নদী দখলের অভিযোগ

জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদকসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাঁকখালী নদী দখল
বাঁকখালী নদী দখল  © সংগৃহীত

কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকার বাঁকখালী নদী দখল ও উপকূলীয় প্যারাবন উজাড় করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয়, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

বুধবার (১৫ জুন) কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে মহেশখালী উপজেলার চরপাড়ার জালাল আহমদের ছেলে মো. ইউসুফকে (৪২)। এই ইউসুফের নেতৃত্বে গত তিন মাসে ৫০-৫৫ একর জমির প্যারাবন উজাড় করে ৪০টির বেশি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

মামলার অপর ১৩ আসামি হলেন মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের রুকন উদ্দিন, নেত্রকোনার মরাদীঘি এলাকার ওমর ফারুক, শহরের নুর পাড়ার মুবিনুল ইসলামের দুই ছেলে তায়েফ আহমেদ ও তাইসাদ সাব্বির, শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকার টিপু, কলাতলীর ইকরা রিয়েল এস্টেট হাউজিংয়ের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম আমান, কক্সবাজার সদর উপজেলার মনুপাড়ার মোহাম্মদ সেলিম ওরফে বর্মাইয়া সেলিম, কক্সবাজার সদর থানার পেছনের হোটেল তাজশেবার মালিক জমির হোসেনের ছেলে মাহবুবর রহমান এবং একই এলাকার জিশান উদ্দিন, শহরের রুমালিয়াছড়ার মো. ইসমাইল, মধ্যম বাহারছড়ার মোহাম্মদ রানা, লালদীঘির পাড় এলাকার ঝুমা, মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুরের ইকবাল হাসানকে আসামি করা হয়েছে।

জানা যায়, কস্তুরাঘাট ও নুনিয়ারছড়া এলাকায় বাঁকখালী নদীর তীরে ৬০০ হেক্টর প্যারাবন রয়েছে। এ প্যারাবনে প্রায় ২০৫ প্রজাতির পাখপাখালি ও জলজ প্রাণীর আবাসস্থল। অন্তত দুই দশক আগে ওয়েস্কা ইন্টারন্যাশনাল নামে জাপানের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন ৬০০ হেক্টরের এই প্যারাবন সৃজন করেছিল। কিন্তু গত তিন মাসে এ নদীর প্যারাবন উজাড় করে জলাশয় ভরাট করে তাতে শতাধিক পাকা, আধা পাকা বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও এ পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি।

নদী দখল, ভরাট, প্যারাবনের লাখ লাখ গাছ কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে শহরে প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ, নদী পরিদর্শন, মানববন্ধন,  স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলসহ বিভিন্ন সংগঠন।  

এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, সম্প্রতি নদীর জলাশয় ভরাট ও দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ মামলায় প্রভাবশালীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু মামলা করে দায়িত্ব শেষ করলে বাঁকখালী রক্ষা করা যাবে না জানিয়ে রাশেদুল মজিদ আরও বলেন, দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

গত সোমবার (১৩ জুন) বেলার পক্ষে ডাকযোগে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না। এতে ১৬ জুন সকাল ১০টার মধ্যে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ বেলার আইনজীবীকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।

মামলার বিষয়ে কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, প্যারাবন কর্তন এবং জলাশয় ভরাট করে দখল আর স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলাটি চট্টগ্রামের পরিবেশ আদালতে ন্যস্ত করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মামলা তদন্ত করবেন।

পরিবেশ অধিপ্তর কক্সবাজার কাযালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, গত ৩-৪ মাসে দখলদারেরা শহরের বাঁকখালী নদীর তীর ভরাট, প্যারাবন উজাড় ও জলাশয় ভরাট করে শতাধিক পাকা, আধা পাকাসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে শতাধিক দখলদারের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর পৃথক ৪টি মামলা করেছে। এবারের মামলায় এজাহারভুক্ত ১৬ জনসহ অন্তত ৩৬ জন দখলদারের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা হয়েছে। দখলদারদের মধ্যে কেউ বাদ পড়লে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ