এসএসসি পাস করেই শিক্ষা সচিব তিনি!
রেজওয়ানুল হক। বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে। বয়স ২১ বছর। টেনেটুনে এসএসসি পাস করেছেন। কিন্তু ফেসবুক আইডিতে তার পরিচয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব। হোয়াটসঅ্যাপস নম্বর ব্যবহার করেন সচিবের একান্ত সচিবের নামে। মাঝেমধ্যে নিজেকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব বলেও পরিচয় দেন।
অজপাড়া গাঁয়ের এই তরুণ এমন বড় বড় সরকারি কর্মকর্তার নাম-পরিচয় ব্যবহারের নেপথ্যে প্রতারণার ফাঁদ। তিনি এসব পরিচয়ে শিক্ষকসহ নানা সরকারি পদে চাকরি দেন, বদলি করেন অনায়াসে। আসলে টাকা নিয়ে প্রার্থীকে তিনি ফেসবুক আর মোবাইল ফোনে ব্লক করে কেটে পড়েন। মাঝেমধ্যে আবার সচিব পরিচয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে অসহায় গরীবদের সহায়তার কথা বলে টাকাও নেন এই প্রতারক।
প্রতারণার দায়ে সোমবার (৬ জুন) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সদস্যারা পীরগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপরই তার প্রতারণার নানা কাহিনী বেরিয়ে আসে। গোয়েন্দারা বলছেন, সরকারি এসব কর্মকর্তাদের নাম করে এই প্রতারক কয়েক লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। তার প্রতারণার ধরণও ভিন্ন।
রেজওয়ানুল কীভাবে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন-সে তথ্য জানাতে গিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের এডিসি জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, এই প্রতারক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খুলে। সেই আইডি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে সখ্য গড়ে তুলে। প্রয়োজন হলে ফেসবুকের বন্ধুদের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখে। সচিব পরিচয় পেয়ে লোকজন তার কাছে চাকরি চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে তার একান্ত সচিব শেখ হাফিজুর রহমান সজলের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন। যদিও একান্ত সচিবের নামে নিজেই মোবাইল নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ আইডি চালু করে রাখে এই প্রতারক।
তিনি বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াও এই প্রতারক নিজেকে সচিব পরিচয় দিয়ে বদলি এবং গরীব ও অসুস্থদের সহায়তার কথা বলে বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতো। সব যোগাযোগই করতো ডিভাইস ব্যবহার করে, কখনও দেখা করতো না। টাকার লেনদেনও হতো মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলে। একইভাবে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেনের নাম ব্যবহার করেও প্রতারণা করে আসছিল সে।
প্রতারণা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নামই কোনো বেছে নেওয়া হলো, জানতে চাইলে সাইবার পুলিশের কর্মকর্তা জুনায়েদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারাও প্রতারক রেজওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। সে দাবি করেছে, এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে তৃণমূলে অর্থাৎ শিক্ষক নিয়োগ হয়। শিক্ষকদের বদলিও করা হয়। গ্রাম পর্যায়ে প্রতারণা করলে ধরা পড়তে হয় না। এজন্যই এই বিভাগে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল।
ডিবির সাইবার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তার রেজওয়ানুলের মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইস যাচাই করে দেখেছেন, কয়েক বছর ধরে সে এই ধরনের প্রতারণা করে আসছিল। এরমধ্যে কয়েকটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট যাচাই করে দেখা গেছে, গত তিন মাসেই তার এসব অ্যাকাউন্টে অন্তত আড়াই লাখ টাকা যুক্ত হয়েছে। শত শত লোক তার প্রতারণার শিকার হলেও সম্প্রতি সে অন্তত পাঁচজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকার বেশি প্রতারণা করে আত্মসাৎ করেছে।
সচিবের নামে প্রতারণার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা ছাড়াও নানা সময়ে প্রতারণার ঘটনায় রংপুরে দুইটি, মাগুরায় একটি ও রমনা থানায় একটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানান সাইবার পুলিশের কর্মকর্তারা।