চাঁদাবাজির মামলায় ৮৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গ্রেপ্তার
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর এলাকায় লুটপাট ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ৮৫ বয়সী বৃদ্ধ এক স্কুল শিক্ষক ও তার ভাতিজাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাশিমপুর থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, মুরগির খামারের ১২ পিস টিন, ২০০ বয়লার মুরগী লুট, ২৫-৩০টি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার ও তার ভাতিজার ওপর। অভিযোগ দায়ের করেন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ করিম নামের একজন।
গ্রেপ্তারকৃত ওই স্কুল শিক্ষক হলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাগবাড়ী এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে কফিল উদ্দিন আহমেদ (৮৫) ও তার ভাতিজা শফিজ উদ্দিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে রাজু (৩৭)।
মামলার এজাহারে বয়স্ক কফিল উদ্দিনের বয়স কম দেখিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারে বয়স দেখানো হয়েছে ৬০ বছর। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে তার বয়স ৭৮ বছরের কাছাকাছি। পরিবারের লোকেরা জানান, তার আসল বয়স প্রায় ৮৫।
গ্রেপ্তারকৃতদের স্বজনদের অভিযোগ, জমি জবর দখলের উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষ একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে পরিবারটিকে। মামলা ও পুলিশের ভয়ে ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
কফিল উদ্দিনের মেয়ে কামরুন্নাহার শোভা বলেন, তার বাবার হাঁটতে চলতে ফিরতেই কষ্ট হয়। সেখানে কারো কাছে চাঁদা চাওয়া বা মারামারি করা অকল্পনীয় বিষয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই তাদের জমি দখল করার চেষ্টা করছে মুহাম্মদ ইমতিয়াজ করিম নামে একজন। জমি দখল করতে না পেরে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। শুধু এই একটি মামলা নয়, এর আগেও নাম বেনামে একই রকমের গল্প সাজিয়ে বিভিন্ন থানায় ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে শিক্ষকের পরিবারে অভিযোগ।
ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মামলার বাদি একজন চিহ্নিত ভূমি দস্যু। সে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে জমি জবর দখল করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। অভিযুক্ত ইমতিয়াজ করিম তাদের বিরুদ্ধে একাই ৬টি মামলা দিয়েছেন। এছাড়া তার লোকজন ও আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে আরো ২৬টি মামলা দায়ের করিয়েছেন।
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবে খোদা বলেন, তিনি মুরগী ও টিন নিয়েছেন কি না জানি না। তবে ওয়াল ভেঙ্গেছেন এবং বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলেছেন, এটা সত্য। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাটি আরো তদন্ত করবে। স্কুল শিক্ষক হয়তো সবকিছু করেননি।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশারত হাসান বলেন, ৮৫ বছর বয়সী কোন ব্যক্তি কারো ওপর হামলা বা চাঁদা চাইতে পারে এটা আসলে বিশ্বাসযোগ্য নয়। পুলিশের এসব বিষয়ে আরো সহনশীল হবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি।
শুক্রবার বয়স্ক কফিল উদ্দিন ও জহিরুল ইসলাম রাজুকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে নব্বই বছরের বেশি একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কেন মারামারির মামলায় আসামি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে গাজীপুর কাশিমপুর থানা পুলিশকে প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে গেছেন।
একই সাথে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর)-এ কাউকে স্বাক্ষী রাখা হয়নি। মামলার এফআইআর-এ কেন স্বাক্ষী রাখা হয়নি সে বিষয়েও পুলিশ কোনো উত্তর দেয়নি।
বয়োবৃদ্ধ কফিল উদ্দিনের মেয়ে কামরুন্নাহার শোভা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাগবাড়ী এলাকায় তাদের পৈত্রিক সূত্রে এক একর ৮০ শতাংশ জমি রয়েছে। সেই জমি রাজধানীর গুলশান এলাকার ফজলুল করিমের ছেলে ইমতিয়াজ করিম ও তার সহযোগী বেলায়েত হোসেন, জসিম উদ্দিন চিশতী ও লায়লা আরজু বানু বিভিন্ন সময়ে দখল করার চেষ্টা করে আসছে।
“এভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের বাড়ি ছাড়া করেছেন অভিযুক্ত ইমতিয়াজ। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বেশ কয়েকটি মামলা দিয়েছেন। আমি ঢাকায় থাকলেও সর্বশেষ মামলায় আমাকেও ১০ নম্বর আসামী করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারে আমিসহ সবাই ঢাকায় বসবাস করি। শুধুমাত্র বাবা মা কাশিমপুর বাগবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এভাবে কাল্পনিক ও মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আমাদের জমি দখলের অপচেষ্টা ও হয়রানী করছেন ভূমি দস্যু চক্রটি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইমতিয়াজ করিম বলেন, অভিযুক্তের পরিবারের লোকেরা ভালো নয়। খোঁজ নিয়ে দেখেন তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে জমি দখলের যে অভিযোগের কথা তারা বলেছে তা মিথ্যা।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার জাকির হাসান জানান, মারামারি মামলায় কাশিমপুর থানা পুলিশ কফিল উদ্দিনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বয়োবৃদ্ধ কফিল উদ্দিন যাতে কোনোভাবে হেনস্থা না হন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে, কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা তিনি স্পষ্ট করতে পারেননি।