ধর্ষণচেষ্টা নয়, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন সেই কলেজছাত্রী

কলেজছাত্রী, ইনসেডে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা
কলেজছাত্রী, ইনসেডে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা   © সংগৃহীত

ময়মনসিংহে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার বিরুদ্ধে কলেজছাত্রী নারী ফুটবলারকে ধর্ষণচেষ্টা অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ তাকে আটকও করেছে। তবে এ মামলা নিয়ে ধূম্রজালও সৃষ্টি হয়েছে। 

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি হলেও ভুক্তভোগী নারী ফুটবলার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ধর্ষণচেষ্টা নয়, বরং তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। 

গ্রেফতার ওয়াহিদুল আলম ফকির ফয়সাল নান্দাইল উপজেলার পৌর শহরের পাছপাড়া গ্রামের লাল মিয়া ফকিরের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। 

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই নারী ফুটবলার নান্দাইল সদরের একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল গত ২২ এপ্রিল তাকে মুঠোফোনে কল করে কলেজে এসে একটি উপবৃত্তির ফরমে স্বাক্ষর দিয়ে যেতে বলেন। ওয়াহিদুলের কথা বিশ্বাস করে তিনি কলেজে যান। 

এতে আরও বলা হয়েছে, সেখানে যাওয়ার পর ওই নারী ফুটবলারকে ওয়াহিদুল একটি পুরনো ভবনের পেছন দিকের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি চিৎকার করলে তাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যান ওয়াহিদুল। 

তবে ভুক্তভোগী নারী ফুটবলার জানান, ওয়াহিদুল ও আমি পূর্বপরিচিত। ওয়াহিদুল ফোন করে বলে, উপবৃত্তির ফরমে স্বাক্ষর দিতে হবে, তাড়াতাড়ি কলেজে আসো। কলেজের গেইটে গিয়ে আমি তাকে ফোন করি। এ সময় সে আমাকে কলেজের পেছনে যেতে বলেন। কলেজের পেছনে যেতেই ফয়সাল মুখ চেপে ধরেন। চিৎকার করলে আশপাশে দুই/তিনজন মানুষ আসতে চাইলে ফয়সাল তাদের চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। এতে তারা পালিয়ে। কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম আমার চিৎকার শুনে কাছে আসতে চাইলে তাকেও চাকু দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়। পরে তিনিও সেখান থেকে পালিয়ে যান। 

তিনি আরও জানান, পরে ওয়াহিদুল ও তার দুই সঙ্গী আমাকে কলেজের পুরাতন ভবনের আড়ালে নিয়ে ধর্ষণ করেন। তার সঙ্গীরা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। ধর্ষণের পর ওয়াহিদুল হুমকি দিয়ে বলে- কাউকে এই ঘটনা জানালে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। বাড়িতে ফিরে মা-বাবাকে বিষয়টি জানালে পরদিন শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে থানায় গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করি। তবে, এ ঘটনার চার দিনের মাথায় মামলার কপি পেয়েছি, যেখানে ধর্ষণচেষ্টার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আমি পুলিশকে ধর্ষণের কথাই বলেছি।

আরও পড়ুন : এমসি কলেজ থেকে অর্থমন্ত্রী মুহিত’র অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি 

ধর্ষণের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে মামলা ধর্ষণচেষ্টার হলো  প্রশ্নে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, ওই নারীর জবানবন্দির ভিত্তিতেই মামলা রুজু করা হয়েছে। 

পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জমান বলেন, ভুক্তভোগী যদি ধর্ষণের অভিযোগ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ধর্ষণের মামলাই নিতে হবে। ভিন্নভাবে উপস্থাপনের সুযোগ নেই। এ ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

এদিকে গ্রেফতার ওয়াহিদুলের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে নেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে নান্দাইল আমলি আদালতের বিচারক রাজিব আহমেদ তালুকদার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, আদালত আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আসামি ওয়াহিদুলকে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ