নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় বড় ভাইরা
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্রধারী পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন মো. আবদুল কাইয়ুম, পলাশ মিয়া, মাহমুদ ইরফান, মো. ফয়সাল ইসলাম ও মো. জুনাইদ বোগদাদী। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, পাঁচজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। সংঘর্ষের সময় তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সামনের সারিতে ছিলেন। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনই সেখানকার ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, সংঘর্ষের সময় কাইয়ুম রড হাতে ছিলেন। তার পরনে ছিল নীল রঙের জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি। জোনায়েদ হেলমেট পরিহিত ছিলেন। তার হাতে ছিল রামদা। এ ছাড়া পলাশ ও ফয়সালের পরনে ছিল হাফ প্যান্ট। তাদের হাতেও অস্ত্র দেখা গেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা জানিয়েছেন, 'জোশে পড়ে' তারা হামলায় জড়িয়েছেন। 'বড় ভাই'রা তাদের দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেন। ঘটনার পর তা আবার ভাইদের কাছে ফেরত দেন। হামলার পর ঢাকা কলেজের হোস্টেলে তারা অবস্থান করেন। ক্যাম্পাস নিরাপদ বিবেচনায় প্রথম দিকে কেউ বাইরে গা-ঢাকা দেননি। ২২ এপ্রিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে যে যার মতো পালিয়ে যান।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নাহিদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথার বাঁ পাশে চারটি, পিঠে তিনটি এবং পায়ে একটি ধারালো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তদন্তের এই পর্যায়ে নাহিদ হত্যায় যারা সরাসরি অংশ নিয়েছেন বা হত্যায় সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই সংঘর্ষের সময় সামনের সারিতে ছিলেন। তবে ঘটনার সময় কার কী ভূমিকা ছিল, সেটি জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে।
আরও পড়ুন- পাঁচ ব্যাংকে নিয়োগে প্যানেলের ফল প্রকাশে হাইকোর্টের রুল
ডিবির প্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় ১৯ এপ্রিলের সংঘর্ষের সময় ব্যবসায়ী, হকার ও দোকানকর্মীদের সঙ্গে নাহিদও রাস্তায় নেমেছিলেন। হকারদের সঙ্গে নাহিদ বড় একটি ছাতা নিয়ে ঢাকা কলেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ছাত্ররা তাদের ধাওয়া দেয়। ছাতার কারণে নাহিদ হয়তো বুঝতে পারেননি যে পেছন থেকে হকাররা চলে গেছেন। তখন ধারালো অস্ত্র দিয়ে নাহিদকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নাহিদকে কুপিয়ে জখমের সঙ্গে ইমন বাসার নামের একজন জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম হাফিজ বলেন, 'ছবিতে যাকে কোপাতে দেখা গেছে, তিনি বাসার ইমন কিনা, এটা আমরা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। গ্রেপ্তারের পর তার পরিচয় জানাতে পারব। আর মোরসালিসকে কারা হত্যা করেছে, তা জানা যায়নি। তবে তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
১৮ এপ্রিল নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের দুই দোকান কর্মচারীর দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সিটি করপোরেশন থেকে ওই দোকানের বরাদ্দ নেন মকবুল। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দু'জনকে ভাড়া দিয়েছিলেন দোকান দুটি। সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। নিহত দু'জনের পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা করেছে পুলিশ। আরেকটি মামলা করেছেন সংঘর্ষের দিন ভাঙচুর হওয়া অ্যাম্বুলেন্সের মালিক। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি তিন মামলায় নিউমার্কেট থানার পুলিশ তদন্ত করছে।