০৭ এপ্রিল ২০২২, ২৩:৪৫

হিজাব পরে স্কুলে আসায় ১৮ ছাত্রীকে পেটানোর অভিযোগ

অভিযুক্ত শিক্ষিকা ও বিক্ষোভরত অভিভাবক-ছাত্রীরা  © সংগৃহীত

নওগাঁর মহাদেবপুরে হিজাব পড়ে স্কুলে আসায় ১৮ ছাত্রীকে গাছের ডাল দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দাউল বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা।

এ ঘটনার জেরে কয়েকশ’ অভিভাবক আজ বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানান। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে না পেয়ে তারা স্কুলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের দুটি ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা অফিসার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার কেরেছেন অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল। তার দাবি একটি পক্ষ তাকে ফাঁসাতে ধর্মকে ব্যবহার করে উস্কানি দিচ্ছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার জাতীয় সংগীত চলাকালীন বিদ্যালয়ের সভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হিজাব পরিধান করা ছাত্রীদের চরম অপমান ও মারধর, অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং স্কুলে হিজাব না পরে স্কুলে আসতে বলেন। হিজাব পরে স্কুলে আসায় প্রায় ১৮ জন ছাত্রীকে মারধর করেন। তার নির্দেশে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অষ্টম শ্রেণির তিন ছাত্রীকে মারধর করেন।


মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি বলেও তিনি জানান।

নির্যাতনের শিকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আফরিন বলেন, বুধবার স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতের পর লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনি পাল কেন হিজাব পড়ে স্কুলে এসেছি এ কথা জিজ্ঞাসা করেই ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল দিয়ে তাদেরকে প্রহার করেন। শিক্ষিকা তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, ‘স্কুলে কোন পর্দা চলবে না। ঢং করে আসচো। বাসায় গিয়ে বোরখা পড়ে থাকো। যখন তোমরা মহাদেবপুর বাজারে যাবে তখন পর্দা করবে। স্কুলে আসলে মাথার কাপড় ফেলে আসবে।’ তিনি ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার জন্য টানাটানি করেন। এমনকি যারা হিজাব ছাড়া শুধু মাস্ক পড়ে এসেছিল তাদের মাস্কও খুলে দেন। তিনি হুমকি দেন যে, ‘কাল থেকে যদি হিজাব ও মাস্ক পড়ে আসো তাহলে পিটিয়ে তোমাদের পিঠের চামড়া তুলে নেয়া হবে।’

সাদিয়া আরোও বলেন, লাইনের কয়েকজন ছাত্রীকে মারতে মারতে তার কাছে এসে তাকে মারতে থাকলে লাঠি ভেঙ্গে যায়। অন্যদের মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি, সুমাইয়া, তিথি, লাকি, নবম শ্রেণির মোনাসহ কমপক্ষে ২০ জন ছাত্রীকে পেটানো হয়।

সাদিয়ার মা সাবেরা বেগম বলেন, তার মেয়ে স্কুল থেকে এসে কান্নাকাটি করে হিজাব পড়ার জন্য ম্যাডাম মেরেছে বলে জানায়। তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা বড় হয়েছে। তারাতো পর্দা করবেই। স্কুলে গিয়েই ভদ্রতা শিখবে। তা না শিখিয়ে যদি এরকম মারপিট করে তাহলে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়? তিনি তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযুক্ত শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করেন।

দশম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে সুমাইয়া আকতারের মা মরিয়ম নেছাও জানালেন একই কথা। তার মেয়ে সুমাইয়া ও তার ক্লাসমেট তিথি জাতীয় সঙ্গীতের পর স্কুলে গেলে তারা কেন হিজাব পড়ে স্কুলে গেছে সেই অপরাধে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল তাদেরকে পেটানোর জন্য শিক্ষক বদিউল আলমকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে বাদিউল মাস্টার সুমাইয়া ও তিথিকে গাছের ডাল দিয়ে পিটায়। এই ঘটনার পর তার মেয়ে ক্লাস না করে বাড়ি এসে কাঁদতে থাকে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনি পাল বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি হিজাব পড়ার জন্য কোনো ছাত্রীকে মারিনি। বরং স্কুল ড্রেসের জন্য নামমাত্র শাসন করেছি। একটি মহল আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্য অভিযোগ এনে না ফেসবুকে ভাইরাল করেছে।

অভিযুক্ত অপর শিক্ষক বদিউল আলম জানান, হিজাব পড়ায় ছাত্রীদেরকে শিক্ষিকা আমোদিনি পাল মারধর করেছেন। তিনি নিজে কাউকে মারেননি বলেও দাবি করেন।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্ম্মণ জানান, স্কুলে হিজাব পড়ে আসায় শিক্ষিকা আমোদিনি পাল ৫/৬ জন ছাত্রীকে মারধর করেছেন। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলে এসে বিষয়টি জেনেছেন। এ বিষয়ে তাকে শোকজ করবেন বলেও জানান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, আগে তাকে শোকজ করি। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।