০৭ এপ্রিল ২০২২, ১১:৪১

৬ বছরেও অসম্পূর্ণ পিএইচডি, নিজের তৈরি অ্যাসিড খেয়ে গবেষকের আত্মহত্যা

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ  © সংগৃহীত

এক অধ‌্যাপকের নাম সুইসাইড নোাটে লিখে আত্মঘাতী হলেন এক গবেষক। ‘অধ্যাপক…আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। উনি আমাকে সঠিকভাবে ‘গাইড’ করেননি।’ খসখস করে এই অভিযোগ লিখেই এক বোতল অ্যাসিড খেয়ে ফেলেছেন সলিড স্টেট ফিজিক্স-এর গবেষক। শুষে নিয়েছেন বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড। পচা ডিমের গন্ধযুক্ত এই গ্যাস অত্যন্ত বিষাক্ত। মৃত্যু নেমেছে মুহূর্তে। ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের মেধাবীর মৃত্যুতে বিস্মিত সহ-গবেষকরা।

দমদম নাগেরবাজারের বাসিন্দা গবেষক শুভদীপ রায়। বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। মা রঞ্জনা রায় একাই থাকেন নাগেরবাজারের বাড়িতে। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানে যান। “কী করে যে এমনটা হল। একবার ও আমাকে বলতে পারত…।” আর কিছু বলার অবস্থায় নেই রঞ্জনাদেবী।

হরিণঘাটা পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর কেস চালু করেছে। চোখ কপালে তুলেছেন অন্যান্য দেশের গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরাও। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন আইআইএসইআর-এর গবেষকরা। তাদের দাবি, মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই।

প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর সৌরভ পাল জানান, তদন্ত হবে। গবেষকদের প্রতি তার অনুরোধ, অচলাবস্থা তুলে নাও। নামী প্রতিষ্ঠানে সলিড স্টেট ফিজিক্সে গবেষণা। জীবনভর প্রথম দশে। তবু কেন আত্মহত্যা? সুইসাইড নোট দেখে সহ-গবেষকদের অনুমান, ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পিএইচডি সম্পূর্ণ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন শুভদীপ।

ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছিলেন, সঠিক গাইডের অভাবেই তার এই অবস্থা। দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বলছেন, ডক্টরেট করতে গিয়ে এহেন অবস্থার সম্মুখীন অনেকেই।

আইআইটি খড়গপুরের গবেষক প্রীতম দে জানান, ২০২১ সালে বেঙ্গালুরু আইআইএসসির এক গবেষক আত্মহত্যা করেছিলেন। দিন পনেরো আগে মোহালিতে আত্মহত্যা করেছেন আরও এক গবেষক। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের কেমিস্ট্রির গবেষক কেয়া মণ্ডল জানিয়েছেন, পিএইচডি করতে গিয়ে গবেষকের আত্মহত্যার খবর নতুন নয়, কে বা কারা এর নেপথ্যে দায়ী তা খুঁজে বার করার সময় এসেছে।

নদিয়ার কল্যাণীর মোহনপুরের এই গবেষণাকেন্দ্র দেশের সেরা গবেষণাকেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি। সে প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে ছিল শুভদীপ। বন্ধুরা জানান, সবসময় সকলের পাশে থাকতেন তিনি। কিছুদিন ধরেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। তার জন্য আত্মহত্যা? ভাবতে পারছেন না বন্ধুরা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গবেষক জানান, ২৯ বছরের বয়সী ওই গবেষক প্রথমে ল্যাবরেটরিতে নিজেই সালফিউরিক অ্যাসিড বানান। তৈরি করেন হাইড্রোজেন সালফাইড। যাতে কোনও কষ্ট না হয় সেজন্য আগেই খেয়েছিলেন কয়েকটি ঘুমের ওষুধ।

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন