সবাইকে হাসি-আনন্দে মাতিয়ে রাখতো কলেজছাত্রী প্রীতি
রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি। মেয়েকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ বাবা-মায়ের চোখেমুখে রাজ্যের বিষণ্নতা ভর করলেও নেই কোনও অভিযোগ। বর্তমানে প্রীতির পড়ার টেবিলটি পড়ে আছে সাজানো গোছানো। পানি খাওয়ার প্রিয় মগটিও সযত্নে টেবিলের ওপর। প্রীতির মা-বাবা জানেন, আর কেউ এই মগে পানি খাবে না।
শনিবার (২৬ মার্চ) শান্তিবাগের বাসায় প্রীতির বাবা মো. জামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এত কষ্টে মেয়েটাকে বড় করলাম। এভাবে চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। যে ক্ষত তৈরি হলো বাকি জীবন সেটা নিয়েই কাটাতে হবে। প্রীতি খুব আদরের ছিল।
আরও পড়ুন: মায়ের কলে বাসায় ফেরা হলো না গুলিবিদ্ধ কলেজ ছাত্রী প্রীতির
অশ্রুসজল কণ্ঠে তিনি বলেন, টানাপোড়েনের সংসার। আগামী মাসে মেয়েটার একটা চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সে ভেবেছিল সংসারে অবদান রাখবে। পরিবারে সচ্ছলতা আনবে। মেয়েটার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না।
জামাল উদ্দিন আরো বলেন, আমার এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়েটা ছিল বড় আদরের। সংসারটাকে হাসি-আনন্দে মাতিয়ে রাখতো। মিরপুরে একটি প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি করি। প্রতিদিন সকাল আটটায় বের হই। ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে দশটা এগারোটা বাজে। সন্তানদের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু এক সন্তান এভাবে চলে গেলো।
আরও পড়ুন: পরিবারের হাল ধরতে এপ্রিলে চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল প্রীতির
প্রীতির মা হোসনে আরা বলেন, কষ্টের সংসারে ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালোই ছিলাম। মেয়েটা বলতো, সে চাকরি পেলে আমাদের আর চিন্তা থাকবে না।
প্রীতি বদরুন্নেসা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়তো। পরিবারের অবস্থা বিবেচনা করে নিজে চাকরির চেষ্টা করছিল৷ ১৫ হাজার টাকায় একটা অফিসে চাকরি নিয়েছিল। সামনের মাসে জয়েন করার কথা ছিল তার। কিন্তু সেটা আর হলো না।
আরও পড়ুন: মামলা করবে না প্রীতির পরিবার, বললেন ‘বিচার কার কাছে চাইবো?’
প্রীতি তার মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পশ্চিম শান্তিবাগে ভাড়া বাসায় থাকতো। তবে ২৪ মার্চের আগে ৪ দিন সে খিলগাঁও তিলপা পাড়ায় বান্ধবী সুমাইয়ার বাসায় ছিলো।
সেখান থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছিল। নিজের বাসার কাছে আসার পর প্রীতিকে তার মা হঠাৎ ফোন দিয়ে বলেন- চট্টগ্রাম থেকে প্রীতির মামা-মামী এসেছেন। সে যেন বান্ধবী সুমাইয়ার বাসায় থাকে। আগামীকাল (২৫ মার্চ) যেন বাসায় যায়। তবে আর বাসায় যাওয়া হলো না প্রীতির।