বিয়ের প্রলোভনে নারী শ্রমিককে ধর্ষণ, ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার
সাভারের আশুলিয়া উপজেলায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুলিয়া ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে এ ঘটনায় ওই নেতাকে ছাত্রলীগ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল হাসনাত শুভ ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিদ আল জাহিদ স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সব তথ্য জানা যায়।
তবে লিখিত অভিযোগের পর ৩ দিন পার হলেও এখনো সাকিব ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অভিযুক্ত সাকিব ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়ি আশুলিয়ার ঘোষবাগে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে- নৈতিক স্খলন ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে, এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুলিয়া ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিব হোসেন ভূঁইয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। সাকিব হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের তদন্তের জন্য, এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তারিকুল হাসান নাজমুল ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেনকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
২৪ বছর বয়সী ভুক্তভোগী পোশাককর্মী ওই তরুণীর অভিযোগ, সে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। অভিযুক্ত সাকিবের সাথে একটি ফার্নিচারের দোকানে পরিচয় এরপর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
তিনি বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত দুইমাস ধরে একাধিকবার ধর্ষণ করে সাকিব। বিষয়টি নিয়ে গত ৬ মার্চ সাকিবকে বিয়ের কথা বললে কালক্ষেপন করে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করে।
ওই তরুণী বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমান সাহেদ আমার বাসায় এসে হুমকি দিযে গেছে এলাকা ছাড়ার জন্য। এলাকার লোকজনের মাধ্যমে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে সাকিব। আমাকে তার খালাতো ভাই ডেকে বিয়ের কথা বলেছিল। আমিও রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একটা ‘ল’ চেম্বারে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়। আসছি আসছি করে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর সে ফোন বন্ধ করে দেয়। আগামীকাল পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করব। তারপর আমি আইনের আশ্রয় নেব।
তিনি আরও জানান, সাকিবের বাড়িতে যোগাযোগ করলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে বলে জানায় তার পরিবার। তারা দায় এড়াতে চাইছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী নারী।
এ আদেশের বিষয়ে ছাত্রলীগের এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সৈয়দ নুরুল হাসনাত শুভ বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে আমরা একটা বিষয় দেখেছি। তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উঠেছে। সেটারই তদন্ত করতে এই আদেশটি আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি যদি সত্যি প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করব। যে ঘটনাটি তিনি ঘটিয়েছে এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার দায় সে নিজে বহন করবেন।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান সাহেদ বলেন, সাকিব আমার কেউ হয় না। কোন রিলেটিভও না। শুনছি সাকিবের বিরুদ্ধে একটা রেপ কমপ্লেন হইছে। সে ছাত্রলীগ করে ও এলাকার ছেলে। আমি ওই মেয়েকে চিনিই না। দেখাই হয় নাই আমার সাথে। পুলিশ যেভাবে করে তাতে আমার কোন আপত্তি নাই।