ছয় বছরেও বিচার হলো না তনু হত্যার, আক্ষেপ বাবা-মার
২০১৬ সালের ২০ মার্চ অমানবিকভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন সোহাগী জাহান তনু। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী তনু হত্যার সেই ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন তোলে। সেই হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। কিন্তু এখনো বিচার হয়নি।
জানা গেছে, দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে পাঁচ বার। তবে হত্যায় জড়িত কেউ শনাক্ত হয়নি। এখনো তদন্তেই সীমাবদ্ধ সবকিছু। ছয় বছরেও হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। শোকে কাতর তনুর বাবা-মা ও দুই ভাই।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজের কাছে ঝোপ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই সাইফুল ইসলাম।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘুরেফিরে একই প্রশ্ন করে। কখন বের হলো, কোথায় কোথায় পড়াতে যেত। কার বাসায় যেত। আর কতো জবানবন্দি দিতাম। বিচার নিয়া কি কইতাম? উপরওয়ালা এর বিচার করবে।’
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পিবিআই আমাকে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি জবাব দিই। আর কি বলার আছে? টাকা-পয়সা নাই। মামলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ছয় বছর হয়ে গেল, বিচার তো পাইলাম না।’
আরো পড়ুন: উৎসবের ডামাডোলে নুসরাত-আবরার-তনুরা যেন হারিয়ে না যায়!
চার দিন পরে ২৫ মার্চ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা ডিবি পুলিশের ওসি একেএম মনজুর আলমকে। ওই বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তদন্ত করেন। পরে ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তখনকার সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর চার বছর পর গত ২১ অক্টোবর মামলাটি সিআইডি থেকে পিবিআই ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এ বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, মামলাটি তারা খতিয়ে দেখছেন। ঘটনাটি অনুসন্ধানে এমন কোনো বিষয় আছে কি না, সিআইডি যা অ্যাড্রেস করেনি, সেটি যাচাই করছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে তনুর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালনে গত বুধবার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে যান ইয়ার হোসেন ও আনোয়ারা বেগমসহ স্বজনেরা। সেখানে তনুর মাগফিরাত কামনায় কবর জিয়ারত ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।