চলন্ত বাসে মারধর করে ঢাবি ছাত্রকে হত্যার হুমকি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টিকিট কাটা নিয়ে তর্কের জেরে ঢাকা নগর পরিবহনের একটি বাসে এ ঘটনা ঘটে। বাসের চেকার, চালক ও অজ্ঞাত একজন তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্র।
এ ঘটনার খবর পেয়ে শাহবাগ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী নগর পরিবহনের তিনটি বাসে ভাঙচুর করে সেগুলো আটক করেন৷ রোববার (৬ মার্চ) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী আজমান সামীর (২০) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্র। থাকেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে আজমান সামীর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি দুপুর ৩টার দিকে শনিরআখড়া থেকে মৎস্য ভবন (বইমেলায়) যাওয়ার উদ্দেশ্যে নগর পরিবহনের ডাবল ডেকার বাসে উঠি। দেরী হয়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়োতে আমিসহ আরও ৪-৫ জন ভুলে টিকিট না কেটে বাসে উঠে পড়ি এবং এ নিয়ে কিছু পথ যাওয়ার পরে পরবর্তী চেকের বাস চেকারের সঙ্গে বাসের চালকের তর্কাতর্কি হয়। পরে আমি টিকাটুলির চেক থেকে টিকেট কাটতে গেলে বাসের চালক আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
আমি এর প্রতিবাদ করি এবং আমার হলের সহপাঠীদের এ বিষয়ে অবগত করি। এরপর বাস আবার যখন রওয়ানা দেয়, তখন বাসের চালককে রমনার পাশে বইমেলার গেটে নামাতে বললেও না নামিয়ে গেট লক করে রমনার সামনে থেকে না হয়ে দ্রুত গতিতে চলে যায় এবং উল্টো পথে বাস ঘুরিয়ে পরবর্তীতে শাহবাগ না হয়ে ঘুরিয়ে অন্য রাস্তায় চলে যায়। আমি আবার তাঁর প্রতিবাদ করায় বাসে উপস্থিত একজন তৃতীয় ব্যক্তি (যাত্রী) হঠাৎ এসে আমাক চলন্ত বাসের মধ্যে আক্রমণ করে এবং প্রচন্ড জোরে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করে।
এর আগে তার সঙ্গে আমার কোনোরকম তর্ক হয়নি এবং কোনো পূর্বপরিচয় নেই। চারপাশের সবাই আমাকে তার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং আমি এই আকস্মিক অদ্ভুত আচরণের কারণ জানতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন ও হুমকি প্রদান করতে শুরু করেন। আমি বারবার বাস থেকে নামতে চাইলেও বাসের দরজা লক করে আমাকে চলন্ত বাসের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় এবং বাস থেকে নামতে দেওয়া হয় না। এরপর বহু প্রচেষ্টার পরে আমি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে নেমে দৌড়ে বাসের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ৯৯৯ এ কল করে আইনি সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করলে বাসের চালক আমার ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
আরো পড়ুন: হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি, ছাত্রীদের আন্দোলনে উত্তাল ইবি
ইতিমধ্যে বাসে আমার ওপর হামলা করা উপরোক্ত ব্যক্তি বাস থেকে নেমে আমাকে টেনেহেচড়ে আবার বাসে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং কোনো কারণ ব্যতীত আবারও আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জীবননাশ করবে বলে হুমকি প্রদান করে। এরপর রাস্তা ফাঁকা থাকায় এবং বাসের সামনে শুধু আমি একা দাঁড়িয়ে থাকায় বাসটি হঠাৎ দ্রুত গতিতে টেনে পালিয়ে যায়।
আমি উপরোক্ত শারীরিক লাঞ্চনা, চলন্ত বাসে হত্যা চেষ্টা ও মানহানির সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই। বাসে আমাদের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিনিয়তই এরূপ দুর্ব্যবহার ও অনিরাত্তার কারণ আমাদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আমি আমার পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে আমার পরিবারের লোকজন এবং আমি উভয়ই নিরাপত্তাহীতায় আছি।
আমি উপরোক্ত ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবী করছি এবং পরবর্তী সময়ে কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গেই এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না এই নিশ্চয়তা প্রাপ্তির দাবি জানাচ্ছি। আজ হয়তো ভাগ্যের জোনরো আমি আজমান বেঁচে গেছি, কিন্তু হয়তো আগামীকাল আরও একজন আজমান ঠিকই রাস্তায় লাশে পরিণত হবে।’
এ বিষয়ে আজমান সামীর জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তিনি মামলা করবেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার রাতে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।