০৪ মার্চ ২০২২, ১২:১৪

প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল, এলাকাবাসীর মানববন্ধন

ভলাকুটের ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আলমগীর মিঞা চৌধুরী।  © সংগৃহীত

সম্প্রতি প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের ভূমি অফিসের চিত্র উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকালে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা।

জানা যায়, ভলাকুটের ভূমি অফিসে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আলমগীর মিঞা চৌধুরী ও তার সহকারী একেএম মনির হোসেন অভিনব কায়দায় দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানি, জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন। ভূমিসেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে তহশিলদারের সিস্টেম (নিজের করা আইন) মানতে হত। কেউ এর প্রতিবাদ করলেই ওই ভূমি কর্মকর্তা স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রকে লেলিয়ে দিতেন সেবা নিতে আসা লোকজনের ওপর।

আরও পড়ুন: তেলের লিটার ২শ টাকা, গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ১৩৯১

ভলাকূট ইউনিয়নের ভুক্তভোগী শাশীম আহম্মেদ জানান, জমির খাজনা বাবদ (ভূমি উন্নয়ন কর) ১০ টাকার রশিদ দিলে তাকে দিতে হয় ২/৩ হাজার টাকা। সাধারণ নামজারির জন্য ১১৭০ টাকার সরকারি ফির পরিবর্তে ৭/৮ হাজার টাকা দিতে হয়। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

একই এলাকার মো. আবু তাহের মিয়া বলেন, আমি তিনটি দলিলের জায়গা একসঙ্গে করতে গিয়েছিলাম। আমার কাছে ৯ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। এত টাকা দেখে আমি আর খারিজ করিনি।

আরেক ভুক্তভোগী মো. উঙ্গু মিয়া জানান, আমার দুটি জায়গা খারিজ করতে গেলে ১৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এত টাকা দেখে আমি আজও খারিজ করিনি। 

এদের মতো একই অভিযোগ ওই ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষের। নাম খারিজের বেলায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি ১ হাজার ১৫০ টাকা হলেও অতিরিক্ত টাকা না দিলে কাগজের অজুহাতে পড়ে থাকে আবেদন।দাবিকৃত ঘুষের অর্থ দিতে অস্বীকার করলে নানা টালবাহানা করে জমির মালিকদের হয়রানি করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তিনি ঘুষের টাকার বিষয়ে কথা বলেছেন। সেখানে কাকে এ টাকা দিতে হয় তার বর্ণনাও তিনি দিয়েছেন। ভিডিওতে তাকে বলতে ‍শোনা যায়, সিস্টেম হইয়া গেছেগা। সিস্টেমের জন্য হে অত হে অত। একপর্যায়ে হয়রানি মুক্ত ভূমি অফিসের কথা উঠতেই তিনি বলেন, ‘সরকার আইন করছে স্টাইল এইডা।’

ঘুষের বিষয়ে জানতে চাইলে তহশিলদার আলমগীর মিঞা চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করেন। ভিডিওর বিষয়টি বললে, তিনি বলেন অসম্ভব। এ ধরনের কোনো ভিডিও নেই। পরে ভিডিওটি দেখালে তিনি নিশ্চিত করেন ভিডিওর ব্যক্তিটি তিনি। তার দাবি এখানে তার কথা কাটছাঁট করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: মেয়াদ শেষ করাই একমাত্র সফলতা, হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মেহেদি হাসান খান শাওন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উনার ভিডিওটি আমি শুনেছি, যা আমাদের অফিসের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর।

উল্লেখ্য, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আলমগীর মিঞা চৌধুরী বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতির আলমগীর-হেলাল-মুজিব পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার সভাপতি প্রার্থী। জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরের দেওড়া গ্রামে তার বাস। বর্তমানের তিনি মধ্য মেড্ডায় নিজ ফ্ল্যাটে থাকেন। একই বিল্ডিংয়ে তার আরও একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য ৪০-৫০ লাখ টাকা।