‘আসামি ধরতে গ্রামে গ্রামে হকারিও করেছি’
লেগুনারি চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে সাধারন একজন মাছ ব্যবসায়ীর হত্যারহস্য উদঘাটন করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিলাল আল আজাদ। আলোচিত না হলে অনেক ক্ষেত্রে খুনের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়না এই কথাটিকে ভুল প্রমাণ করে প্রশংসায় ভাসছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে মা, বাবা ও স্বজনদের অনুপ্রেরণায় পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এই মামলার সফল তদন্ত শেষে জানালেন নিজের অনুভূতির কথা।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বিলাল বলেন, লেুগুনার সহকারী সেজে হত্যা মামলার আসামী ধরার পর এত সাড়া পাব, কখনোই ভাবিনি। তবে প্রচার পাব ভেবে এই কাজ আমি করিনি। যখন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিই, তখন আমি মনে করি ভুক্তভোগী ব্যক্তিটি আমারই স্বজন। যত কষ্টই হোক, চেষ্টা থাকে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা। খুনিদের গ্রেপ্তারের পর ভুক্তভোগীর স্বজনেরা হাউমাউ করে কাঁদেন, আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, তখন কী দারুণ অনুভূতি হয়, তা বলে বোঝানো যাবে না।
আরও পড়ুন: সিলেটে শ্বশুরবাড়ি গেলেন মঈন আলী
মামলাটির তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাছ ব্যবসায়ীকে (মহির উদ্দিন) হত্যার ঘটনায় কোনো সূত্র ছিল না। সিসিটিভি ক্যামেরায় একটি দৃশ্য পাওয়া যায় যে এক ভুক্তভোগীকে লেগুনা থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সেই লেগুনা শনাক্তের উপায় খুঁজতে গিয়েই হেলপার (চালকের সহকারী) হওয়ার ভাবনা আসে।
বড় কাজ ছিল লেগুনাটিকে শনাক্ত করা। সেটা দুদিনেই সম্ভব হয়। অবশ্য এটা মনে হয়েছিল যে সময় লাগবে। লেগুনা শনাক্তের পর মাদারীপুরে গিয়ে চালককে পেয়ে যাই। চালক জানান, তিনি আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন ঘটনার দিন যে ব্যক্তি লেগুনা চালিয়েছিলেন, তাঁকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। লেগুনা চালিয়ে যে ৭০০ টাকা আয় হয়েছে সেগুলা রাস্তায়ই খরচ হয়ে গেছে। খাওয়াদাওয়া, টুকটাক অন্যান্য খরচ।
অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বিলাল বলেন, ছয় বছর আগে একটি হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় টানা সাত দিন বাড়ি বাড়ি ফেরি করে পুরোনো জুতা বিক্রি করেছি। জুতা বিক্রিতে ১ হাজার ৪০০ টাকা মুনাফাও হয়েছিল। একপর্যায়ে আসামির নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। পরে গভীর রাতে মুন্সিগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হই।
এই মামলার সফলতার প্রসঙ্গে এএসআই বলেন, একজন সাধারণ মানুষের হত্যারহস্য উন্মোচনে কেউ যদি অনুপ্রাণিত হন, সেটাই হবে আমার আসল সফলতা। তবে পুলিশে এমন অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা আরও অনেক আছে। নিষ্ঠার সাথে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।