এইচএসসি ফেল, তবে ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেটে গড়েছেন ৫ তলা ভবন
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর মোড়ে কাশিমপুর ডক্টরস হাসপাতালে চিকিৎসক মো. শিবলী সাদিক। কিন্তু ১৯৯৮ সালে বিকেএসপি থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করলেও ২০০০ ও ২০০১ সালে দুইবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। এরপর একটি প্যারাডেমিক ডিপ্লোমা ডিগ্রি ও ভুয়া এমবিবিএস সার্টিফিকেট নিয়ে ডাক্তার হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এছাড়াও চীন থেকে ভুয়া এমবিবিএস সনদ রয়েছে তার। এই ভুয়া ডাক্তার শিবলী সাদিককে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) গাজীপুরের ওই হাসপাতাল থেকে দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনির নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিষয়টি জানিয়েছে দুদকের জনসংযোগ দপ্তর।
গত ১৯ জানুয়ারি এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া ৭ চিকিৎসককে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেফতার করে দুদক। তাদের সূত্র ধরেই শিবলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ভুয়া ১২ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। সে মামলায় শিবলী সাদিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, চীনের ভুয়া ডিগ্রি দিয়ে বিএমএ ও বিএমডিসির নিবন্ধন নিয়েছেন। এভাবে প্রতারণা করে সাভারে ৫ তলা বাড়ি, দামি গাড়ি ও নিজের হাসপাতালসহ গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ।
এর আগে চীনের তাইশান মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদধারী ৭ চিকিৎসককে গ্রেফতার করে দুদক।
গত ৩ জানুয়ারি মাহমুদুল হক নামে একজন হাইকোর্টে আগাম জামিন চান। তাকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা গেছে তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর সনদ ভুয়া। এমবিবিএস সনদধারী ওই ব্যক্তিরা কখনো চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি।
তিনি আরও বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সঙ্গে সরকারি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের বিষয়েও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এজাহারে বলা হয়, এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় দুদক।
ওই বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, উল্লিখিত ১২ জনের এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এছাড়া সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত গ্রহণ করা হয়। তাতেও দেখা যায় যে সনদের স্বাক্ষরগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।