মাসে লাখ টাকার মাদক লাগে রাবি শিক্ষকের ছেলের
ওয়ারেন্টভুক্ত এক মাদক মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার কাছ থেকে ৫টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এই কার্ডগুলোতে প্রায় ৫ কোটি টাকা রয়েছে। আটক ওই ব্যক্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা অনুষদের সাবেক পরিচালক।
ওই ব্যক্তির নাম আজাহার আলী আপেল (৪১)। তার বাবা মৃত আবেদ আলী ছিলেন রাবির সাবেক পরিচালক। আপেল নিজেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে তৃতীয় বর্ষে ওঠার পর তার পড়ালেখার ইতি ঘটে মাদকের কারণে। প্রতি মাসে লাখ টাকার মাদক সেবন করেন তিনি।
জানা গেছে, রাজশাহীতে আপেলদেরর তিনটি বিশাল বাড়ি রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে রয়েছে একাধিক মার্কেট, রয়েছে ৭৩ বিঘা ফসলি জমি ও আমবাগান। ২০০০ সালে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১২ বছর আগের মাদক মামলা, ভ্রুণ হত্যা ও নারী নির্যাতনের একাধিক মামলায় আপেলকে শিবগঞ্জ থেকে আটক করেছে র্যাব।
আরও পড়ুন: এখনই বন্ধ হচ্ছে না রাবি, চলমান থাকবে ক্লাস-পরীক্ষা
বৃহস্পতিবার (০৬ জানুয়ারি) বিকেলে শিবগঞ্জের জালমাছমারী গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে আটক করে র্যাব-৫, সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল। শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র্যাব।
এ সময় আপেলসহ মাদক সরবরাহকারী আসিফ আলী নিশান ও আপেলের আমেরিকা প্রবাসী ভাইয়ের ছেলে মাদকসেবী সাদমান শাকিব আলীকে আটক করে র্যাব। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে শিবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে শুক্রবার সকালে আরও চার মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও জাল টাকা জব্দ করা হয়েছে।
আটকরা হলেন- শিবগঞ্জ উপজেলার জালমাছমারী এলাকার মৃত আবেদ আলীর ছেলে মো. আজহার আলী আপেল (৪১), আতাহার আলীর ছেলে ও আপেলের ভাতিজা সাদমান শাকিব আলী (২০), দৌলতপুর উপরটোলা গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে আসিফ আলী নিশান (২৬), উজিরপুর ডাকাতপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মো. জাহির (৩৫), সেলিমাবাগ গ্রামের মৃত ধনা মমিনের ছেলে রানাউল হক (৩১), দৌলতপুর মহাজনপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা ইয়াসিন (৪২) ও তার ছেলে শাহরিয়ার নাজিম জয় (২২)।
আরও পড়ুন: দিল্লির লাল কেল্লা’র মালিকানা দাবি করছেন ভারতীয় এক নারী
র্যাব জানায়, সাবেক শিক্ষকের ছেলে আপেলের কাছ থেকে চারটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। এই চারটি কার্ডে আনুমানিক ৫ কোটি টাকা রয়েছে বলে র্যাবকে জানিয়েছে আপেল। এইচএসসি পাস করার পরই ২০০০ সালে বাড়ির অসম্মতিতে প্রেম করে আফসানা ইয়াসমিনকে বিয়ে করে আপেল। মাদকাসক্তির কারণে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। মাদক মামলা থেকে বাঁচতে বিদেশে পালিয়ে যায় আপেল। পরে ২০১৫ সালে দেশে ফিরে আফরোজা খাতুনকে বিয়ে করে এবং ৬ মাসের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।
র্যাব-৫, সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সানারিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ২০১৭ সালে আপেল হিরোইনে আসক্ত হয়ে পড়েন। পরে ২০১৮ সালে ঢাকায় একটি পুর্নবাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ২০১৯ সালে তাজনুভা তাজরিন অভি নামে এক নারীকে বিয়ে করে। বিয়ের ২ মাসের মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন অভি। এছাড়া ২০১০ সালের একটি মাদক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি আপেল।
মেজর সানারিয়া জানান, আপেল বর্তমানে পুরোপুরি মাদকাসক্ত। প্রতি মাসে তার মাদকের পেছনে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। এমনকি তার একাধিক গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। যাদের নিয়ে তিনি টিকটক ভিডিও করেন। মাদক ব্যবসায়ী আসিফ আলী নিশান তার মাদকের সরবরাহ করত। আপেল তার ভাতিজা সাদমান শাকিব আলীকে নিয়ে মাদক সেবন করত ও প্রতিদিন তার বাসায় আসর বসাত। সাদমান শাকিবের মা সুবর্না খাতুন এয়ার হোস্টেস ছিলেন এবং বিমানে স্বর্ণ পাচারের সময় পুলিশ তাকে আটক করে। গত কয়েক বছর ধরে সুবর্না জেলে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ছত্রাকের নতুন প্রজাতি শনাক্ত করলেন জাবির দুই অধ্যাপক
সংবাদ সম্মেলনে আপেলের সাবেক স্ত্রী তাসনুভা তাজরিন অভি বলেন, তাকে (আপেল) বিয়ে করে অনেক বড় ভুল করেছি। সে আমার সব গহনা বিক্রি করে মাদক সেবন করেছে। আমাকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। এমনকি আমার পেটে থাকা সন্তানকেও হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।