ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে চলে অপহরণ ব্যবসা
টিনডার নামক একটি ডেটিং অ্যাপসে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। অপহৃতদের নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের থেকে টাকা চাওয়া হয়। সাইবার-জগৎকে ব্যবহার করে এই ব্যতিক্রমী অপরাধকাণ্ডটি চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ওই অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। টিনডার ছাড়া আরও ১৬টি অ্যাপসের খোঁজ পেয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা। অ্যাপসগুলো হলো- মিনগেল২ (Mingle2), টানটান (Tantan), চ্যাটিউ (Chatiw), নিনবো (Neenbo), ব্যাডো (Badoo), হ্যাপন (Happn), ল্যামঅ্যাওয়ার (Lamour), ট্যাগড (Tagged), লভো (Lovoo), হাই৫ (Hi5), ওয়াপলগ (Waplog), সিএসএল (CSL), বু (Boo), মামবা (Mamba), উওপ্লাস (WooPlus) এবং জয়ি (zoe)। এগুলোয় মেয়েদের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করানো হয়। এরপর একান্ত সময় কাটানোর প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করা হয়।
ডিবি সুত্রে জানা গেছে, নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য রাকিব (ছদ্মনাম) নামে এক ছেলে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডেটিং অ্যাপস টিনডার (Tinder) ডাউনলোড করে। এরপর সে তা ব্যবহার করতে থাকে। এভাবে কিছুদিন গেলে সোনিয়া মেহের নামে একটি মেয়ের সঙ্গে টিনডার অ্যাপসের মাধ্যমে তার পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বের হয়ে সামনাসামনি দেখা করার পরিকল্পনা করে। একটা সময় তারা দেখা করার তারিখ ও স্থান ঠিক করে। রাকিব সেই তারিখের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। রাকিব সেদিন সোনিয়ার কথামতো যথাসময়ে যথাস্থানে হাজির হয়।
সোনিয়ার সঙ্গে দেখা হলেও তার সঙ্গে একান্ত সময় কাটানো আর হয় না। ওই দিনই রাকিব জানতে পারে সোনিয়া একটি অপহরণকারী চক্রের সদস্য। সুকৌশলে সোনিয়া ও তার চক্রের সদস্যরা রাকিবকে তাদের গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে একটি অচেনা ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। চোখের বাঁধন খোলার পর রাকিব দেখতে পায় সেখানে শুধু সোনিয়াই নয়, চক্রের আরও দু-তিন জন নারী এবং পাঁচ-ছয় জন পুরুষ উপস্থিত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেখানে উপস্থিত পাঁচ-ছয় জন পুরুষ রাকিবের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে রাকিবের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত নারীদের কিছু ছবি তুলে নেয় এবং রাকিবের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। দাবি করা টাকা রাকিব দিতে অস্বীকার করলে তার ওপর ফের শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম জানান, রাকিব শারীরিক নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আত্মীয়দের থেকে ই-ট্রানজেকশন বিকাশে ২ লাখ টাকা অপহরণকারীদের দেয়। এরপর চক্রটি তাকে ছেড়ে দেয়। অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা কিছুদিন পর ফের রাকিবকে কল করে এবং আগের তোলা নারীদের সঙ্গে রাকিবের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আরও টাকা দাবি করে। এরপর রাকিব নিরুপায় হয়ে ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
ফিন্যানশিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম মামলার তদন্তে নেমে জানতে পারে শুধু টিনডার অ্যাপসই নয়, এর মতো আরও অসংখ্য অ্যাপস আছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন আবদুল জলিল হাওলাদার, তার মেয়ে সোনিয়া মেহের ও ইউসুফ মোল্লা। ডিবি জানিয়েছে, মামুন, রাজু, বীথি, মিথিলাসহ আরও দু-তিন জনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।