পাখিকে বিয়ের প্রলোভনে ৩-৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নাজমুল

ইশরাত জাহান পাখি ও নাজমুল আকন
ইশরাত জাহান পাখি ও নাজমুল আকন  © টিডিসি ফটো

‘‘পরিচয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ক্যাশ, বিকাশ, মোবাইল রিচার্জ, জামা-কাপড়, ঢাকায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ বিভিন্নভাবে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া একইভাবে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কও গড়ে তুলেছেন। আমি তার সঙ্গে সংসার করার স্বপ্নে তার পেছনে খরচ করেছি। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।’’

পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাজমুল আকনের বিরুদ্ধে এমনটিই অভিযোগ করেছেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান পাখি। এর আগে, ইশরাত জাহান নাজমুল নামে এ যুবককে অপহরণ ও জোরপূর্বক বিয়ে করার ঘটনায় আলোচনায় আসেন।

তবে ‘অপহরণ করে জোরপূর্বক বিয়ে’ করার এ অভিযোগ সঠিক নয় বলেই দাবি তার। পাখি বলেন, নাজমুল স্বেচ্ছায় বিয়ে স্বাক্ষর করেছে। তাকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করার বিষয়টি সত্য নয়। রবং, সে বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এসব অভিযোগ মুছতে সে অপহরণের নাটক সাজিয়েছে।

পড়ুন: কলেজছাত্রকে অপহরণ করে বিয়ে করলেন তরুণী

তিনি আরও বলেন, তার সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে কয়েকমাসে প্রায় ১৫শ টাকার মত মোবাইল রিচার্জ এবং তিন হাজার মত বিকাশে দিয়েছি। বিকাশের সব স্টেটমেন্ট আমার কাছে রয়েছে। এছাড়া তাকে নগদ টাকা, তার ঢাকায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা দিয়েছি। সে আমার চোখে ধুলু দিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নাজমুল আমার সাথে প্রতারণা করেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজমুল। তিনি বলেছেন, প্রথমত বিয়ের বিষয়টিই সঠিক নয়। সে আমার থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ভিত্তিহীন একটি কাবিননামা তৈরি করেছে। সেটি বাতিলে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনার আগ পর্যন্ত এ কাবিনের কোন ভিত্তি নেই। আদালত থেকে এ কাবিনের বৈধতা পেলে পরে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।

পড়ুন: জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বিয়ের খবর সঠিক নয়: পাখি

টাকা-পয়সার বিষয়ে নাজমুল বলেন, এটাও একটি ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট কথা। আমাকে বিপদে ফেলতে সে এসব নাটক সাজিয়েছে। তার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন পর সে আমাকে প্রেমের অফার করে। কিন্তু আমি এতে রাজি হইনি। সে বন্ধু হিসাবে আমাকে অল্প কিছু টাকা ধার দিয়েছে। সে টাকা আমি পরে পরিশোধও করে দিয়েছি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রায়ের বাজার কাজী অফিসে তাদের বিয়ে হয়। কাজী রফিকুল ইসলাম তাদের বিয়ের বিষয়ে বলেন, তারা উভয়ে স্বেচ্ছায় কাজি অফিসে এসেছে। তাদের কথা জানতে পেরেছি, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরপর তারা বিয়ে করতে এসেছে। এসময় কাজী অফিসে কাবিনের টাকা নির্ধারণ নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তারা বিষয়টি সমাধানও করে নিয়েছে। ছেলে-মেয়ে যখন বিয়ের বিষয়ে মতামত দেয়, তখনই আমি বিয়ে পড়িয়েছি।

এদিকে, এ পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাখি-নাজমুল দুজনেই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। নাজমুল গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিয়ের ঘটনায় তাকে ‘তুলে এনে জোরপূর্বক বিয়ে’ করেছেন অভিযোগ করে মামলা করেন। অন্যদিকে নাজমুলের বিরুদ্ধে পাখির মামলাটি যৌতুকের। দুইটি মামলা চলমান রয়েছে। তবে পাখির করা মামলাটির শুনানি আগামী ৬ ডিসেম্বর ধার্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পাখির দায়ের করা মামলার বিষয়ে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাখির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরেই তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর নাজমুল নানান অজুহাতে পাখির পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করেন। এ ঘটনায় পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের আগামী ৬ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ