এসএসসির ভুয়া প্রশ্নপত্রের ফাঁদ, কলেজ পড়ুয়া ৩ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৩৯ PM , আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৩৯ PM
চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। প্রশ্নফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়। এমন অভিযোগে প্রশ্নফাঁস চক্রের দুই গ্রুপের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতার হওয়ারা সবাই কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান।
তারা হলেন- কালিমুল্লাহ, আল-রাফি ওরফে টুটুল ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু। তাদের মধ্যে কালিমুল্লাহ টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, আল রাফি টুটুল মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ডিবি বলছে, চক্রের সদস্যরা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব ছিল। কিছু ছাত্র ও অভিভাবক পড়াশোনাতে মনোযোগ না দিয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র কেনার জন্য ব্রাউজ করতে থাকে। গ্রেফতারকৃত প্রতারকরা মূলত এসব অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানা আকর্ষণীয় প্যাকেজের অফার দিত ইন্টারনেটের মাধ্যমগুলোতে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে ম্যানুয়ালি ও সাইবার পেট্রলিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র ও অভিভাবকদের মধ্যে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা করে এবং যারা প্রশ্নপত্র কেনার চেষ্টা করে তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
আজ রবিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবিপ্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে। তাতে ব্যর্থ হলে প্রশ্নফাঁস করার নামে প্রতারণার বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সাইবার পেট্রলিং করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরের পূবাইল থানা এলাকা ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তিনজনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩টি স্মার্টফোন, ২টি বাটন ফোন, নগদ ১২ হাজার টাকা ও ৬টি সিম।
ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটি মূলত বিভিন্নভাবে ভুয়া মেসেঞ্জার, ফেসবুক একাউন্ট খুলে মেসেঞ্জারে শতভাগ নিশ্চয়তা সহকারে বিভিন্ন বোর্ডের সকল বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস করার বিজ্ঞাপন দিত। প্রশ্ন ফাঁসের এই চক্রের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হতো। এরপর প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো। এই চক্র বিভিন্ন পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এই বলে সার্কুলেশন করত যে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা ও জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে একাধিক প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। সেই ছবি তারা বিভিন্নজনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাফে ও জিমেইলে সেন্ড করে দেবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ৭০০ জন।
অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার আরও বলেন, পাবজি খেলায় পটু গ্রেফতার আল রাফি ওরফে টুটুল সাইবার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। টুটুল ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য আলমগীর হোসেন নামে একটি ফেক আইডি খোলে। আইডিটি খোলার জন্য সে একটি টেম্পোরারি মেইল আইডি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে। এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও টেম্পোরারি মেইলটি দুই থেকে তিনদিন সক্রিয় থাকার পরে অটোমেটিক্যালি ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে যায়।