স্ত্রীর মামলার জেরে যবিপ্রবির কর্মকর্তা বহিষ্কার
গত ১৭ অক্টোবর রোববার যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতন করে ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ এনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার দপ্তরের কর্মকর্তা বিপ্লব হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিপ্লব হোসেনকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে যবিপ্রবি প্রশাসন। গতকাল ২৭ অক্টোবর বুধবার যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে কর্মরত সেকশন অফিসার মো: বিপ্লব হোসেনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী সুমাইয়া ইয়াসমিন-এর অভিযোগ ও কয়েকটি আঞ্চলিক প্রত্রিকায় বিরূপ খবর প্রকাশিত হওয়ায় তাকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাধারণ আচরণ, শৃঙ্খলা ও আপিল সংক্রান্ত বিধি মোতাবেক সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল।"
উল্লেখ্য, যবিপ্রবির সেকশন অফিসার বিপ্লব হোসেনের স্ত্রী বাদী হয়ে স্বামীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন এ মামলায় যবিপ্রবির অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসানকেও আসামি করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বিপ্লবের বাবা যশোর সদর উপজেলার হালসা গ্রামের আবু মুছা, মা নুর নাহার বেগম, বোন নওশিন শারমিলি বিভা ও শহরের পুলিশলাইন পাওয়ার হাউজপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে ফারুক হাসান হাওলাদার। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তার সাথে আসামি বিপ্লব হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আসামি বিপ্লব তার সরলতার সুযোগে ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবনযাপন করতে থাকেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নিতে বললে নানা তালবাহানা শুরু করেন। এরপর বাদী আদালতে মামলা করে। ওই মামলার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হলে বিপ্লব চাকরি রক্ষার জন্যে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর বিপ্লব তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে সংসারের যাবতীয় মালামাল ও বাড়ি করার জন্যে দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়। তারপরও নানা অজুহাতে বিপ্লব শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন। এর মধ্যে বাদী অন্তঃসত্ত্বা হয়। বিষয়টি আসামি বিপ্লব মেনে নিতে না পেরে কৌশলে ওষুধ খাইয়ে স্ত্রীর গর্ভের দু’ মাস তিনদিনের সন্তান নষ্ট করে ফেলেন। পরবর্তীতে আসামি বাদীর কাছে বাড়ির কাজের জন্যে দু’ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা না পেয়ে বিপ্লবসহ তার পরিবার নির্যাতন শুরু করেন। এর মধ্যে পুনরায় বিপ্লবের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে আসামিরা সন্তান নষ্টের জন্যে ফের ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
গত ৯ অক্টোবর বিপ্লব ও তার পরিবারের লোকজন বাদীর তলপেটে লাথি, কিলঘুষি মেরে, গলা টিপে ধরে ওষুধ খাইয়ে দেয়। পরে যবিপ্রবির অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান পুলিশ সেজে বিপ্লবের বাড়িতে যান। সকল আসামি মিলে বাদীকে বেধড়ক মারপিট করে। বাদী বিষয়টি তার পরিবারকে জানান। পরিবারের পক্ষ থেকে ৯৯৯ কল করলে বিপ্লবের বাড়িতে পুলিশ যায়। পরে বাদীর মা ও স্থানীয়রা হালসায় বিপ্লবের বাড়িতে গিয়ে বাদীকে উদ্ধার করে যশোর আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে রোববার বাদী আদালতে এ মামলা করেন।