যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ: তদন্তে দুদক
চেক জালিয়াতির মাধ্যমে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই ঘটনায় বোর্ডের কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু।
তিনি বলেন, ‘এই জালিয়াতির সঙ্গে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান সরাসরি জড়িত। আপনারা সিসিটিভির ফুটেজ দেখেন। চেয়ারম্যান রাত পর্যন্ত ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিকের সঙ্গে সব সময় বসে থাকেন।’
বোর্ড চেয়ারম্যান ছাড়া উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন, প্রশাসন শাখার ভারপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার রাকিব হাসান ও হিসাব সহকারী আবদুস সালামও এ জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ। ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবুও সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে ওই চার কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে দুদক যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষা বোর্ডে যায়। তদন্তের অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করেছেন। দলটি বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ডে ছিল।
এর আগে সকালে দুদকে লিখিত অভিযোগ দেয় শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লেও সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় গত দুই দিন দুদকে অভিযোগ দেয়া যায়নি। রোববার দুদক কার্যালয় খোলার পর শিক্ষাবোর্ড সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা লিখিত অভিযোগটি দেন।
এদিকে এ ছাড়া তাদের মধ্যে সহকারী আবদুস সালাম সপরিবারে পালাতক রয়েছেন বলেও জানা গেছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, কিছু না জানিয়ে রোববার অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন আব্দুস সালাম। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি তিনি (হিসাব সহকারী) পরিবারসহ বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।
দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, শিক্ষা বোর্ড থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তারা ঢাকায় প্রধান কার্যালয়কে বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তারা তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে অভিযোগ তদন্তে শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রব্বানিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
জালিয়াতির বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের অডিট কর্মকর্তা আবদুস সালাম জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন মালপত্র কেনার জন্য ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করা হয়। অর্থাৎ ৯০ হাজার ৩২৪ টাকা বরাদ্দ করা হয়।
তবে ব্যাংক স্টেটমেন্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায় ঢাকার ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং সাতটি ও যশোরের শাহী লাল স্টোর দুটি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। সেই হিসাবে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৬ টাকার হদিস নেই।
চেকের মুরি বইয়ের (গ্রাহকের কাছে থাকা চেকের অংশ) সঙ্গে বৃহস্পতিবার ব্যাংকের স্টেটমেন্ট মেলানোর সময় এই জালিয়াতি ধরা পড়ে বলে জানান আব্দুস সালাম।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক শিক্ষা বোর্ড শাখার ব্যবস্থাপক এস এম শাহিদুর রেজা বলেছিলেন, ‘ঢাকার ফকিরাপুলের ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের চেকের উল্লিখিত অ্যামাউন্ট ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ক্লিয়ারিং চেকের মাধ্যমে তুলে নেয়া হয়েছে।’
যশোর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন জানিয়েছেন, যে দুই প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট করা হয়েছে, তাদের মালিকরা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন।
তিনি বলেন, ‘যে দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, তাদের মালিকরা বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে খবর পাঠাচ্ছেন। তবে এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। টাকা ফেরত দিলেও তা আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হবে।’