আইস কেনাবেচায় গ্রেপ্তার ১০ তরুণ-তরুণী সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের
তারা ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। কেউ কেউ বিদেশে থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফিরেছেন। আর এখন তারা জড়িয়েছেন ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের ব্যবসায়। সর্বনাশা এই মাদক সেবনও করতেন তারা। এই চক্রটির ব্যাপারে তথ্য পাওয়ার পর প্রায় এক মাস ধরে চেষ্টা চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। অবশেষে শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত রাজধানীর বনানী, উত্তরা, বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রুবায়াত, রোহিত হোসেন, মাসুম হান্নান, আমান উল্লাহ, মোহাইমিনুল ইসলাম ইভান, মুসা উইল বাবর, সৈয়দা আনিকা জামান ওরফে অর্পিতা জামান, লায়লা আফরোজ প্রয়া, তানজীম আলী শাহ ও হাসিবুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে আধাকেজি আইস ও পাঁচ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর (উত্তর) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, এখন ইয়াবার চেয়ে আইসের দিকে বেশি ঝুঁকছে মাদকসেবীরা। আইস ইয়াবার চেয়ে ২০ গুণ শক্তিশালী। এটি দেখতে তালমিছরির মতো। মাত্র এক গ্রাম আইস দিয়ে ৫০০ পিস ইয়াবা তৈরি করা সম্ভব। আর জব্দ করা আধা কেজি আইস দিয়ে তৈরি করা যেত এক লাখ ইয়াবা।গ্রেপ্তারদের অভিভাবক, এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যও এখনও আইস চেনেন না। এ কারণে তারা ইয়াবার চেয়ে আইসের ব্যবসা সুবিধাজনক মনে করেছিল। তাছাড়া কাঁচামাল নিয়ে এসে ইয়াবা তৈরি করা সহজ।
ফজলুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় আইস কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণ করে ১০-১২ জনের একটি দল। সেই দলের একজন গত ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়েছে। এর ফলে চক্রের বাকিদের শনাক্ত করার কাজ সহজ হয়েছে। প্রথমে একটি ফোন নম্বর পাওয়া যায়, সেই নম্বরের সূত্র ধরে শুরু হয় অভিযান।
আইস ব্যবসায়ী চক্রটিকে গ্রেপ্তারের অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান। তিনি জানান, প্রথমে বনানী থেকে রুবায়াত, রোহিত হোসেন ও বাবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে রোহিত মালয়েশিয়া থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। অন্যদের মতো তিনিও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। তার বাবা একটি মার্কেটের মালিক। রুবায়াতের বাবার নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে। এই তিনজন বনানীতে বাবরের ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে নিয়মিত মাদক সেবন ও কেনাবেচা করেছেন। পরে মাসুম হান্নানকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার ব্যাপারে আগেই জিডি করেছিল পরিবার। অভিযানের সময় পরিবারের সদস্যরাই তাকে ধরিয়ে দেন। গ্রেপ্তার ইভানের বাবা ছিলেন বড় ঠিকাদার। ইভান আইস সংগ্রহ করতেন লায়লার কাছ থেকে। আর আনিকা জামানের কাছ থেকে কিনতেন লায়লা। তাদের প্রত্যেকেরই সাত-আটজন করে নিয়মিত ক্রেতা আছে। তারা এক গ্রাম আইস ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বেচতেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রথমে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি আইস বেচাকেনায় দ্বিতীয় সারির কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আইস কারবারে জড়িত। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে এই চক্র আইস আমদানি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আইসের ক্রেতা বাড়াতে তারা প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিকে বিনামূল্যে সরবরাহ করেন। পরে তারা আসক্ত হন এবং নিয়মিত ক্রেতা বনে যান।