ভিকারুননিসায় গভর্নিং বডির বৈঠকে হাজিরা দিলেই ৫ হাজার টাকা
রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির (জিবি) বৈঠকে হাজিরা দিলেই প্রত্যেক সদস্য পাঁচ হাজার টাকা করে সম্মানী পেয়ে থাকেন। আর কলেজ বিউটিফিকেশন প্রজেক্ট কমিটির বৈঠকে হাজিরা দিলে সিনিয়র সদস্যরা পান চার হাজার টাকা করে।
এছাড়া প্রজেক্ট কমিটির জুনিয়র সদস্যরা পান তিন হাজার, আর উপদেষ্টারা প্রত্যেকে পান চার হাজার টাকা করে। শুধু তাই নয়, প্রজেক্ট কমিটির প্রধান হিসেবে আহ্বায়কের সম্মানী মোট তিন লাখ ৭১ হাজার টাকা। আর গভর্নিং বডির মূলতবি বৈঠকেও সদস্যরা প্রত্যেকে নেন পাঁচ হাজার টাকা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গভর্নিং বডির সদস্যদের এই সম্মানী নেওয়ার বিষয়ে অভিভাবক নজরুল ইসলাম চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগে বলা হয়, প্রতি সভায় পাঁচ হাজার টাকা করে খরচ করার কথা থাকলেও প্রতি মিটিংয়ে প্রত্যেক সদস্য নিচ্ছেন পাঁচ হাজার টাকা করে। আবার মূলতবী সভায় প্রতিদিন প্রত্যেক সদস্য পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে সম্মানী নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি (বর্তমানে ভূমি সচিব) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি কোনও কিছুই জানাতে পারবো না, কারণ তদন্ত হচ্ছে। টোটাল বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে এই মুহূর্তে আমার কিছু বলার নেই।’
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, ‘প্রজেক্ট কমিটির আহ্বায়কের কাছ থেকে খরচের বিপরীতে বিল-ভাউচার চেয়েছি লিখিতভাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল-ভাউচার উপস্থাপন না করায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ও শিক্ষা বোর্ডকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, ‘গভর্নিং বডির অনুমোদনে আগে থেকেই পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। সেই ধারাবাহিকতায় তারা সম্মানী পান।’
বিউটিফিকেশন প্রজেক্ট কমিটির সদস্যদের সম্মানীর বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ফওজিয়া বলেন, ‘গভর্নিং বডির অনুমোদনেই তারা সম্মানী পান।’
এদিকে বর্তমান অধ্যক্ষ প্রজেক্টে খরচ হওয়া টাকার বিল-ভাউচার চান কমিটির আহ্বায়কের কাছে। সাত দিনের সময় দিয়ে গত ৮ এপ্রিল অধ্যক্ষ লিখিতভাবে বিল-ভাউচার উপস্থাপন করার জন্য চিঠি দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটির আহ্বায়ক বিল-ভাউচার না দেওয়ায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে (ইইডি) অভিযোগ করেন বর্তমান অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। এরপর ৩০ জুন ইইডি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
আবার শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভর্তিসহ কলেজের যাবতীয় কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ, ভর্তি বাণিজ্য ও কলেজের উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজে আর্থিক অনিয়মের চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গভর্নিং বডির সদস্যের বিরুদ্ধে গত ১৮ জুলাই আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
এসব ঘটনার মাঝেই সম্প্রতি অধ্যক্ষের সঙ্গে একজন অভিভাব এবং গভর্নিং বডির সদস্যের দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়।
গভর্নিং বডির সদস্য মনিরুজ্জামান, প্রজেক্ট কমিটির সদস্য এবিএম মনিরুজ্জামানের (খোকন) ফাঁস হওয়া ফোনালাপে অধ্যক্ষকে সরকারি সংস্থায় কেনও চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। আবার অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্যও চাপ সৃষ্টি করেন তিনি। এসব ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোনা শুরু হলে মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।