০৮ আগস্ট ২০২১, ১৬:০৮

স্বপ্ন’র সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ৩ হ্যাকার গ্রেফতার

আটককৃত তিন হ্যাকার  © ফাইল ছবি

সুপার শপ স্বপ্নের সিস্টেম অভিনব কায়দায় হ্যাক করে ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে তিন যুবক হ্যাকার। তবে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম এই তিন যুবককে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার মো. নজরুল ইসলাম। তিনি আর ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেন।

তার দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো,   

'আসেন এইবার একটু নতুন সমস্যা নিয়ে কাজ করি। আজ হোক কাল হোক এটাই এখন বড় কন্সারনঃ সাইবার নিরাপত্তা।'

'সুপার শপ “স্বপ্ন” এর সিস্টেম অভিনব কায়দায় হ্যাক করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ,
৩ হ্যাকার গ্রেফতারঃ সিটিটিসি, ডিএমপি

বাংলাদেশের অন্যতম চেইন সুপার শপ “স্বপ্ন”-এর ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার তৈরি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে হ্যাকার চক্রের তিন সদস্যকে ৭ আগস্ট, ২০২১ তারিখ রাতে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র সিটিটিসি - সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

সুপার শপ “স্বপ্ন” তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারাদেশের ১৮২টি আউটলেটের সেলস মনিটরিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের হিসাব, ডিজিটাল ভাউচার ম্যানেজমেন্টসহ সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। “স্বপ্ন” এর ডিজিটাল সিস্টেমটি তাই এডভান্স সাইবার সিকিউরিটি প্রটোকল অনুযায়ী অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তৈরি করা হয়েছিল। “স্বপ্ন” সুপার শপের এই শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ব্রিচ করে গত ২৬ জুন, ২০২১ থেকে ০৯ জুলাই, ২০২১ তারিখের মধ্যে বিপুল অংকের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ডিজিটাল ভাউচার জেনারেট করে বিক্রি করা হয়।

বিষয়টি “স্বপ্ন” কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তারা ডিএমপি’র সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের কাছে অভিযোগ জানান। সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সাইবার ইনভেস্টিগেটরদের একটি চৌকশ টিম “স্বপ্ন” সুপার শপের ডিজিটাল সিস্টেমের ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও রিভার্স এনালাইসিস সহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকার চক্রটির ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট সনাক্ত করে। এই সুনির্দিষ্ট তথ্যের প্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে গত ৭ আগস্ট, ২০২১ তারিখ রাতে ১। মোঃ নাসিমুল ইসলাম (২৩)-কে নওগাঁ ২। রেহানুর হাসান রাশেদ (২২)-কে গাইবান্ধা এবং ৩। রাইসুল ইসলামকে (২৫) ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে হ্যাকিং এর কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল সেট, ২টি ল্যাপটপ ও ১টি সিপিইউ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ অর্থ, ইলেকট্রনিক কার্ড ও “স্বপ্ন” ই-ভাউচারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশের অন্যতম সক্রিয় হ্যাকার গ্রুপের সদস্য। হ্যাকার গ্রুপটি “স্বপ্ন”-এর ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার কয়েকটি ই-কমার্স ইউজারদের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ২৫% ছাড়ে বিক্রি করে বিপুল অংকের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। হাতিয়ে নেয়া অর্থ তারা বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি একাউন্টে জমা করে। গ্রেপ্তারকৃত হ্যাকারগ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

ইতোপূর্বে হ্যাকার গ্রুপের এই সদস্যরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট যেমন https://www.freelancer.com, https://xrosswork.com এবং বাংলাদেশী বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম সিকিউরিটি ব্রিচ করে “বাউন্টি” দাবি করে।

এছাড়াও এই হ্যাকার গ্রুপটি প্রথমসারির বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স, প্রসিদ্ধ বাস কোম্পানি, ইলেকট্রনিক গেজেট চেইন আউটলেটসহ স্বনামধন্য অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং-এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। এমনকি সুচতুর এই হ্যাকারদের কাছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের একসেস রয়েছে বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন ডার্ক ওয়েব মার্কেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে লগ ইন ক্রিডেনশিয়াল ক্রয় করে বলেও তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা, ডিএমপি, ঢাকা এর মামলা নং-০৭, তারিখঃ ০৩/০৮/২০২১ খ্রিঃ, ধারা- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ১৮/২৩/৩৪/৩৫ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তাদের দশ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অপরাপর সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।'