মৃত সেক্রেটারীর স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, মামলা

মোসলেম উদ্দিন খান
মোসলেম উদ্দিন খান  © সংগৃহীত

মৃত সম্পাদক আব্দুল কাদেরের স্বাক্ষর জাল করে ২ লক্ষ ৮ হাজার ৫শ’ টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাতসহ ৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেতুয়ান গ্রামের গোরস্থানের সভাপতি স্থানীয় ইউনিয়ন তাবলীগ জামাতের আমীর মোসলেম উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে।

মৃত আব্দুল কাদের উপজেলার বেতুয়ান গ্রামের গোরস্থানের সাধারণ সম্পাদক। আর অভিযুক্ত ওই গোরস্থানেরই সভাপতি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আদালত মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে বেতুয়ান গোরস্থান পরিচালনা কমিটিতে মোসলেম উদ্দিন খানকে সভাপতি ও আব্দুল কাদেরকে সেক্রেটারী করা হয়। পূর্ববর্তী কমিটি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উপরোক্ত কমিটির নিতট জমা দেয়। এই কমিটি থাকাকালীন ৪ বছরে গোরস্থানে জালসা দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে আয় হয় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে গচ্ছিত হয় ৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। ব্যাংক হিসাবে গোরস্থানের প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আয় থাকলেও ব্যাংক হিসাবে সেই টাকা গচ্ছিত ছিল না। গোরস্থানের উন্নয়ন কাজে কমিটির পক্ষ থেকে টাকার হিসাব চাইলেও সভাপতি হিসাব দিতে নানা তালবাহানাসহ গড়িমসি শুরু করেন।

এরই মধ্যে গত ৫ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে সেক্রেটারী আব্দুল কাদের মারা যান। কাউকে কিছু না জানিয়ে সভাপতি পরের দিন ৬ ডিসেম্বর মৃত সেক্রেটারীর স্বাক্ষর জাল করে অগ্রণী ব্যাংকের বড়াল ব্রীজ শাখা হতে ১২৬২৭৪৪ নং চেকের মাধ্যমে গোরস্থানের হিসাব থেকে ২ লক্ষ ৮ হাজার ৫শ’ টাকা উত্তোলন করেন। এর আগেও সভাপতি মোসলেম উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে গোরস্থানের হিসাব থেকে ৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, বেতুয়ান গোরস্থানের জন্য চলতি বছরের মে মাসে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন ও সেক্রেটারী আবুল হাশেম দায়িত্ব পাওয়ার পর পূর্ববর্তী সভাপতি মোসলেম উদ্দিন খানের নিকট হিসাব বুঝে চান। কিন্তু তিনি কোন হিসাব বুঝে দিতে না পারায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর গোরস্থানের সেক্রেটারী আবুল হাশেম বাদী হয়ে পাবনার আমলী আদালত ৪ এ মোসলেম উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪৭/২০২১, তারিখ-১৯/০৭/২১।

গোরস্থান কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারী জানান, পূর্বের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন খান একজন অস্বচ্ছ মানুষ। তাবলীগ জামাতের আড়ালে তিনি শুধু মৃত ব্যক্তিদের কবরস্থান নিয়েই জালিয়াতি ও প্রতারণা করেননি। তিনি খোদ সরকারের সাথে প্রতারণা করেছেন। গোরস্থানের টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেই তিনি জাল কাগজপত্র বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম তুলে সরকার প্রদত্ত ভাতা উত্তোলন করে আসছিলেন। চলতি বছরে তিনি অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ায় গেজেট থেকে তার নাম বাদ পড়েছে। পাশাপাশি সরকারি ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় তাবলীগ জামাতের আমীর মোসলেম উদ্দিন খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সঠিক নয়। সেক্রেটারী আব্দুল কাদের জীবিত থাকতেই তিনি চেকে স্বাক্ষর করেছিলেন। ওই চেকে টাকা উত্তোলন করেছেন ক্যাশিয়ার। এ ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। গেজেট থেকে মুক্তিযোদ্ধার নাম কর্তন ও ভাতা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার ভাতা শুধু আমার নয় আরও অনেকের বন্ধ করে দিয়েছে। ভাতা নেই বলে যে আমি মুক্তিযোদ্ধা নই এটা ঠিক না।

মৃত সেক্রেটারী আব্দুল কাদেরের ছেলে কাওছার আহমেদ বলেন, আমার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। গোরস্থান কমিটির পক্ষ থেকে কখনো বাবার কাছে চেক সই বা কোন খাতায় সাক্ষর করাতে কেউ আসেনি। সভাপতি পরিকল্পিত ভাবে গোরস্থানের টাকা আত্মসাৎ করে আমার মৃত বাবাকে অসম্মানিত করছেন। কাওছার বলেন, এর আগেও বাবার অসুস্থতার সুযোগে সভাপতি গোরস্থানের টাকা আত্মসাত করেছেন। এটার প্রতিবাদ করায় বাবার উপর সভাপতি ক্ষুব্ধ ছিলেন।

গোরস্থানের ক্যাশিয়ার রেজাউল করিম বলেন, সভাপতি মোসলেম উদ্দিন খান স্বাক্ষর যুক্ত চেক দিয়ে আমাকে টাকা তুলে আনতে বলেছিলেন। আমি বাহক হিসেবে দুবার চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে পুরো টাকাই তার হাতে তুলে দিয়েছি।


সর্বশেষ সংবাদ