শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে গরু-ছাগলের হাট
করোনায় গত দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সুযোগে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঠিকাদাররা একাধিক স্কুল মাঠে বসিয়েছে গরুর হাট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতায় এসব হাট বসছে। খোদ রাজধানীর কয়েকটি স্কুলেও বসানো হয়েছে এই হাট। আগে এতসংখ্যক স্কুলের মাঠে গরু-ছাগলের হাট বসেনি বলে জানা গেছে। অথচ স্কুল আঙিনায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যতীত অন্য কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের পাশে খোলা জায়গায় গরুর হাটের ইজারা দিয়েছে, কিন্তু সেই গরুর হাট গিয়ে পৌঁছেছে ধলপুরে সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।
জানা যায়, বর্তমানে স্কুল বন্ধ থাকলেও চলছে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া-নেওয়া। এতে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে স্কুলে আসতে হচ্ছে, ক্লাসরুমে বসতে হচ্ছে। কিন্তু গরুর হাট বসানোয় সেই কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া হাট শেষ হয়ে গেলেও বর্জ্য কেউ পরিষ্কার করে না, খানাখন্দে ভরে যায় স্কুল মাঠ। এতে ঈদের পরও কয়েক মাস প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, কোনো অবস্থায়ই স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে অন্য কিছু করা যাবে না। আর গরুর হাট বসানোর তো প্রশ্নই আসে না। আমরা এ ব্যাপারে খোঁজ নেব। এ ছাড়া যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠেও গরুর হাট বসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিছু গরু স্কুল মাঠে ঢোকানোর পর গত শুক্রবার রাতে অভিভাবকদের হস্তক্ষেপে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মাঠ খালি করে। স্কুলটির অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সুজন বলেন, আমরা শুক্রবার সন্ধ্যায় গিয়ে স্কুল মাঠে প্রায় ৩০০ গরু ও অর্ধশতাধিক ছাগল দেখতে পেয়েছি। ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি এবং স্কুলের কিছু কর্মচারী এখানে গরুর হাট বসাতে চেয়েছিলেন। আমরা জেনেছি, এই গরুর হাট বসানোর পেছনে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। অধ্যক্ষ নিজে স্কুল কম্পাউন্ডে থাকেন, তিনি কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।
ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহার বলেন, ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি স্কুলের একাংশ ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারাই তাদের ভাড়া নেওয়া অংশে গরু বিক্রির চেষ্টা করছিল, ব্যানারও টানিয়েছিল। জানার সঙ্গে সঙ্গেই রমনা থানাকে জানিয়েছি এবং জিডি করেছি। এ ছাড়া স্কুলের শিক্ষকরা কয়েকটা গরু কিনে দেখভালের জন্য কর্মচারীদের দিয়েছিলেন। সেগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৪টি হাটের মধ্যে ছয়টিই বসেছে বিভিন্ন স্কুলের মাঠে। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর হাট বসানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফয়জুর রহমান বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মহোদয় পৌর কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল মাঠে হাট বসানোর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাটের ইজারা দেয় পৌরসভা। পৌর কর্তৃপক্ষই স্কুল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে হাটটি বসিয়েছে।