৭ বছরের ছাত্রকে খুন করেছে তারই মাদ্রাসার তিন শিক্ষার্থী
'মাদ্রাসায় পড়তে ভালো লাগে না। একটি খুন করলেই মাদ্রাসা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর তাদের পড়তে হবে না। তাই তারা বগুড়ার শিবগঞ্জের বেলতলী হাফেজিয়া মাদ্রাসার স্বাধীন নামের ৭ বছরের এক ছাত্রকে খুন করেছে।' এমনি স্বীকারোক্তি দিয়েছে খুনের দায়ে অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থী!
হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৬ মাস পর বগুড়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) হাতে আটক সুমন ইসলাম (১৬), রুহুল আমিন (১৬) ও ওমর ফারুক (১৫) মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি বগুড়া অফিসের ইন্সপেক্টর খন্দকার ফুয়াদ রুহানি জানান, অভিযুক্তরা শিশু হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রবেশন অফিসারের উপস্থিতিতে শিবগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিস্কৃতি হাগিদক তাদের জবানবন্দী ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেন। পরে আদালত অভিযুক্তদেরকে যশোরে কিশোর সংশোধনাগারের সেফ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সিআইডি কর্মকর্তা জানান, জবানবন্দীতে অভিযুক্তরা বলেছে যে মাদ্রাসায় পড়তে তাদের ভালো লাগত না। তাই তারা এমন কিছু করতে চেয়েছিল যাতে কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তারা মনে করেছিল, মাদ্রাসার কোনো এক ছাত্রকে খুন করলে সেটি চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে, আর তাদের সেখানে পড়তেও যেতে হবে না। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরপর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর স্বাধীন নামে একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে তারা হাতে পায়। পরে তাকে বেলতলী হাফেজিয়া মাদরাসা-সংলগ্ন নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
স্বাধীন ওই মাদ্রাসার মক্তব বিভাগের ছাত্র ছিল। ওই ঘটনায় নিহত স্বাধীনের বাবা শাহ আলম শেখ ১৭ জানুয়ারি শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। সংশ্লিষ্ট আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এর পর গত ১৩ মার্চ মামলাটির তদন্তভার পান সিআইডি বগুড়া অফিসের ইন্সপেক্টর খন্দকার ফুয়াদ রুহানি।
তিনি জানান, প্রায় সাড়ে তিন মাসের তদন্ত শেষে গত ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর অভিযান চালিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার তালপুকুরিয়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে সুমন ইসলাম, মাটিয়ান গ্রামের মেহেদুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমিন ও বাহাদুরপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ওমর ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেন। তারা একই মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্র।