শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ২০ লাখ টাকা প্রতারক চক্রের হাতে
একটি প্রতারক চক্র ৪ হাজার শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা অভিভাবকদের নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি প্রতারক চক্রটি কীভাবে কাজটি করে থাকে তা জানতে ও তাদের কয়েকজন সদস্যকে আটক করতে পুলিশ সক্ষম হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রতারণার মাধ্যমে অভিভাবকদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের ওটিপি নম্বর সংগ্রহ করে। তারপর উপবৃত্তির টাকা বিভিন্ন নগদ এজেন্ট অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করে।
আরো জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে মোবাইলে ফোন করে থাকেন। আর এভাবেই তারা অভিভাবকদের নগদ অ্যাকাউন্টের ওটিপি নম্বর জেনে নেন। তারপর গোপন ওটিপি নম্বর ব্যবহার করে প্রতারক চক্র উপবৃত্তির অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিছু নির্দিষ্ট এজেন্ট অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করে।
এইভাবে মোট ৬৫টি এজেন্ট নম্বর বা অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে চক্রটি ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সূত্র মতে, একটি এজেন্ট নম্বরের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেনের পরে নগদ কর্তৃপক্ষ বনানী থানায় ডিজিটাল সুরক্ষা আইনে ২ এপ্রিল একটি মামলা করে।
এরপরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ও বিশেষ অপরাধ বিভাগের আওতায় ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মামলাটি তদন্ত শুরু করে এবং এই চক্রের কার্যক্রমের সন্ধান করে।
ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহিদুল ইসলাম বলেন, 'গত মে মাসে ডিবি পুলিশ নরসিংদী থেকে এই জালিয়াতি দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশ পুরো গ্যাংয়ের তথ্য পেয়েছিল। শুক্রবার আরও তিন সদস্য ফরিদপুর ও রংপুরে পৃথক অভিযান চালিয়ে এই দলটির গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।'
তিনি বলেন, ফোনে দিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা আগে জানতে চায় উপবৃত্তির ৪৫৬ টাকা পেয়েছে কিনা। অভিভাবকরা পেয়েছে জানালে, তারা জানায় যে আরও ২ হাজার টাকা উপবৃত্তি পাঠানো হবে।
তারপরই তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার আসল কার্যক্রম শুরু হয়।
তারা বলে, 'আপনার নাম্বারে একটি বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। আমাকে সেই নম্বরটি (ওটিপি) দিন।' অভিভাবকরা নম্বরটি দিলে প্রতারণাকারীরা সাথে সাথে ওই অ্যাকাউন্টে উপস্থিত টাকা তাদের নির্দিষ্ট এজেন্ট নাম্বারে স্থানান্তর করে দেয়। এভাবে ওই গ্যাং কয়েকমাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ওই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, 'ওই দলটির মূল নেতার বিষয়ে আমাদের কাছেও তথ্য রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা যদি মূল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারি তবে আমরা আরও তথ্য পাব। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে আমরা জানতে পারি যে এই দলটি কোনোভাবে উপবৃত্তির তালিকাটি পেয়েছে। আমরা সেটি তদন্ত করছি।'
গ্যাংয়ের সদস্য আসাদুল ইসলাম, আবু বক্কর সিদ্দিক ও পলাতক সিরাজুল রংপুরে থাকতেন। তারা অভিভাবকদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট এজেন্ট নম্বরে অর্থ স্থানান্তর করতেন। এই অর্থ থেকে ৩০% কমিশন নিয়ে তারা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় তাদের প্রতারণাকারী সদস্য মনির মিয়া, কামরুল ইসলাম ও হাসান শেখকে পাঠাতেন। ২০% কমিশন নিয়ে তারা নিজে রেখে বাকী ৫০% অর্থ অজানা অভিযুক্তদের কাছে প্রেরণ করতেন।
এসআই রেজাউল জানান, ওই চক্রের সদস্যরা ৬৭টি নগদ এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।