উপবৃত্তির নামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর কাছ থেকে টাকা নিলেন প্রধান শিক্ষক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২১, ১১:৩১ AM , আপডেট: ২৫ জুন ২০২১, ১১:৩১ AM
উপবৃত্তি দেওয়ার নামে ১৩ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক আমিনুল করিমের বিরুদ্ধে। অফিস খরচ বাবদ একসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন তিনি।
ইনস্টিটিউশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংখ্যালঘু ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়। করোনার কারণে তিনবার আবেদনের তারিখ পরিবর্তন হয়। এরই মধ্যে অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করা ১৩ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
তখন আবেদন খরচ বাবদ প্রধান শিক্ষক ১৩ শিক্ষার্থীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে টাকা তুলে জাকারিয়া মাসুম প্রধান শিক্ষকের রকেট অ্যাকাউন্টে দেয়। সেই সঙ্গে টাকা জমা দেওয়ার মেসেজের স্ক্রিনশট রেখে দেয় সে।
জাকারিয়ার ভাষ্য, আমাদের জীবন আট-দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো নয়। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে লেখাপড়া করতে হয়। বিশেষ করে ব্রেইল পদ্ধতির বইসহ শিক্ষা উপকরণ প্রিন্ট করতে হয়। অনেক টাকা খরচ হয়। উপবৃত্তির টাকা পেলে লেখাপড়ায় অনেক উপকার হতো। উপবৃত্তির আওতায় আমরা সবাই যাতে আসতে পারি, এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সপ্তম শ্রেণির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইমুল হাসান জানায়, বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষককে দিলাম। বৃত্তি পেলে কিছু টাকা পরিবারে এবং বাকিটা নিজের কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু আমাদের টাকা নিয়ে প্রধান শিক্ষক মেরে দেবেন, ভাবতেই পারিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আমিনুল করিম বলেন, পাঁচ হাজার নয়, আবেদন অনলাইনে জমা দেওয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নিয়েছিলাম। করোনার কারণে সময়মতো আবেদন জমা দিলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই ১৩ জনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অনুরোধ করেছি।
আপনার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেট অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা পাঠানোর মেসেজের স্ক্রিনশট জাকারিয়ার কাছে রয়েছে জানালে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক আজহারুল হক বলেন, উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের টাকা নেওয়ার বিষয়টি অমানবিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এই শিক্ষাবৃত্তির আওতায় বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা, দশম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চার হাজার টাকা পাবে।