ইংরেজিতে এমএ, পেশায় চোর
শিক্ষাগত যোগ্যতা ইংরেজিতে এমএ। বাবা সরকারি অফিসার আর মা স্কুল শিক্ষিকা। ছেলে সৌমাল্য চৌধুরী পেশায় চোর। চুরিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে তিনি। আর তা করতে গিয়ে ফের পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের এই বাসিন্দা।
হাওড়ায় গয়না চুরির ঘটনার সূত্র ধরে শনিবার (১৯ জুন) এই ‘উচ্চশিক্ষিত’ চোরকেই গ্রেফতার করেছে সাঁকরাইল থানার পুলিশ। জানা যায়, সৌমাল্যের এই স্বভাবের কারণে তাঁর মা আত্মহত্যা করলেও চুরির নেশা ছাড়তে পারেনি সে।
পুলিশ জানায়, সৌমাল্য ছাড়াও তার দুই সহযোগীও এখন পুলিশের জালে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সোনার গয়না।
জানা গেছে, আসানসোল, হাওড়া, হুগলি জেলায় কম পক্ষে ২০টি চুরির ঘটনায় যুক্ত সৌমাল্য। তার বাবা ছিলেন সরকারি আধিকারিক। মা ছিলেন শিক্ষিকা। প্রথমে নেশা হলেও এখন চুরিকে রীতিমতো পেশায় পরিণত করে ফেলেছে শিক্ষিত পরিবারের এই যুবক। আর আগেও পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়, কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পর ফের পুরনো পেশাতেই।
ঘটনায় প্রকাশ, গত ৯ জুন হাওড়ার সাঁকরাইল থানার দুইলা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ১০ ভরি সোনার গহনা চুরি করে চম্পট দেয় সে। পালানোর সময় ফ্ল্যাটের এক আবাসিক স্কুটির নম্বর লিখে নেয়। এই নম্বর এর সূত্র ধরেই পাঁশকুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় সৌমাল্য চৌধুরী ও তার এক সাগরেদ প্রকাশ শাসমলকে।
এর পর পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মাধব সামন্ত নামে আরও এক জনকে। এদের রবিবার (২০ জুন) হাওড়া আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ।
এদিকে, ছেলে চুরি করে থাকলে সাজা হোক, এমনই চাইছেন এমএ পাশ চোর সৌমাল্য চৌধুরীর বাবা। আজ সোমবার (২১ জুন) সৌমাল্যর বাবা সাংবাদিকদের জানান, এর আগেও চুরির অভিযোগে ছেলেকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সে যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে তার সাজা হোক।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজিতে স্নাতকোত্তর সৌমাল্য পড়াশুনো শেষ করে চৌর্যবৃত্তিকেই পেশা করেন। ২০১৮ সালে আসানসোলে একাধিক চুরির অভিযোগে বাড়ি থেকে সৌমাল্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর কয়েকমাস জেলবন্দি ছিলেন তিনি।
আজ আসানসোলের কোর্টমোড়ে বহুতল আবাসনের দোতলায় সৌমাল্যদের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায় নেমপ্লেটে জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম। বেল বাজাতে দরজা খোলেন সৌমাল্যর বাবা সুনীলবাবু।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এর আগেও চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল সৌমাল্য। গভীর রাতে বাড়িতে এসে তাঁকে গ্রেফতার করেন আসানসোল থানার ওসি। ছেলের গ্রেফতারির পরদিনই আত্মঘাতী হন মা মধুছন্দা চৌধুরী।
তিনি বলেন, পুলিশ জানিয়েছিল আসানসোলে অনেকগুলো চুরির সঙ্গে যুক্ত সে। তবে আলমারি খুঁজে চুরির মাল কিছু পাননি পুলিশকর্মীরা।
ফের চুরির অভিযোগে ছেলের গ্রেফতারি নিয়ে তিনি বলেন, হাওড়ায় কী হয়েছে তা তো আমি জানি না। ছেলে আমাকে জানিয়েছিল সে পাঁশকুড়ায় চাকরি করে। আমার মনে হয় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। কেউ চুরি করে ওর ওপরে দোষ দিচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করুক। ছেলে দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর শাস্তি হোক।
আসানসোলের ফ্ল্যাটে এখন একাই থাকেন সুনীলবাবু। ছেলের কীর্তি নিয়ে তিনি যখন কথা বলছিলেন তখনও দেওয়ালে ঝুলছে সৌমাল্যর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের কোলাজ। শিক্ষিত যুবকের এহেন প্রবণতায় হতবাক প্রতিবেশীরাও।