নারী পাচার

তিনবেলা খাবারের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক, দেখানো হয় পুলিশের ভয়

বিদেশে নারী পাচার
বিদেশে নারী পাচার  © প্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরা, বেনাপোল ও বুড়িমারী সীমান্তপথে ভারতে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশি নারীদের। পাচার করা নারীদের প্রত্যেকের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছর। একটি সংঘবদ্ধ চক্র ফাঁদ পেতে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তাদের পাচার করছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সীমান্ত পাড়ি দিতে জনপ্রতি অন্তত ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। নারী পাচারের এই চক্র সক্রিয় পাঁচ বছর ধরে। বাংলাদেশি তরুণীদের বিদেশে ভালো চাকরি ও টিকটকের নায়িকা তৈরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছিল। এই চক্রের অন্যতম হোতাসহ কয়েকজন পুলিশ-র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। যে কোনো সময় তারা গ্রেপ্তার হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

এদিকে, এক তরুণীর নিপীড়নের ভিডিও প্রকাশের পর রেশ না কাটতেই খোঁজ মিলেছে আরও ছয় তরুণীর ভিডিওর। ধারণা করা হচ্ছে, তারাও ভারতের বেঙ্গালুরুতে কোনো গোপন আস্তানায় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। প্রথম ভিডিওতে নির্যাতনের শিকার তরুণী ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা। নতুন দুটি ভিডিওতে যেসব তরুণীকে দেখা গেছে, তারাও বাংলাদেশি নাগরিক বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

প্রথম ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক বাবুসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাদের মধ্যে দু'জন পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। যৌন নিপীড়নের শিকার ওই তরুণীকেও কেরালা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়েটির মেডিকেল পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের ১৪ দিনের হেফাজতে নিয়েছে ভারতীয় পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, টার্গেট করা তরুণীদের টোপ দিয়ে প্রথমে সীমান্ত এলাকায় নেওয়া হয়। পরে দালালদের মাধ্যমে বিনা পাসপোর্ট ও ভিসায় তাদের ভারতে নেওয়া হয়। এসব তরুণীকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি করা হচ্ছে। অহিও নামে একটি হোটেলে অনেক যৌনকর্মী রয়েছেন, যারা বাংলাদেশি।

অন্য এক কর্মকর্তা জানান, শুধু তিনবেলা খাবারের বিনিময়ে তাদের হোটেলে থেকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হয়। সেখানে দিনের পর দিন তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এর বিনিময়ে তাদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না। কেউ পালানো ও প্রতিবাদের চেষ্টা করলে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করায় পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ারও ভয় দেখানো হয়।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিভিন্ন ঘাট রয়েছে। আলাদা 'ইজারাদার' রয়েছে। নারী পাচারকারীরা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসব ঘাট দিয়ে পাচার করে থাকে। তারপর তাদের দালালদের হাতে তুলে দেয়।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক নারীকে ভারতে নেওয়ার পর সেখানে গিয়ে তারা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। অনেককে উদ্ধার করে সেফ হোমে রাখা হয়। এর পর তাদের ট্রাভেল পাস দিয়ে বাংলাদেশ পাঠায়। গত ছয় মাসেই এ প্রক্রিয়ায় অন্তত ৫০ নারী দেশে ফিরেছেন। আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, নারী পাচারের ঘটনায় ১২৬টি মামলা তার ইউনিটে তদন্তাধীন। ভারতে পাচার করা হয়েছে এমন ঘটনায় মামলা আছে ১৫টি।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, দেশে-বিদেশে নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এরই মধ্যে চক্রটির অনেক তথ্য আমাদের হাতে এসেছে।


সর্বশেষ সংবাদ