ভুয়া সনদে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, সুপারিশের অপেক্ষা!

অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল কুতুব
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল কুতুব  © ফাইল ফটো

ঢাকার সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ ব্যবহার করে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়; ওই সনদ ব্যবহার করে ১০তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছেন তিনি। ভুয়া সনদ নিয়েই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হবার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে তার।

অভিযুক্ত নিবন্ধনধারীর নাম মো. আব্দুল্লাহ আল কুতুব। সে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা বাজার ইউনিয়নের ধল্লা গ্রামের মো. শহীদুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, আব্দুল্লাহ আল কুতুব ২০১৪ সালে দশম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তার নিবন্ধন রোল নম্বর ৪৩১০৪৬৪৮ ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ২০১৪১০১৬০৭৫০। নিবন্ধন পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক অংশে ৬৯.৫০ এবং ঐচ্ছিক অংশে ৫৪ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এখন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন তিনি। তবে অভিযোগ উঠেছে নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় দেয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার একটি সনদ টাকার বিনিময়ে বানিয়ে নিয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মো. আব্দুল্লাহ আল কুতুব স্নাতক পর্যায়ে বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির গ্রীন রোড ক্যাম্পাস থেকে। চার বছর মেয়াদী ওই কোর্সে তার সিজিপিএ দেখানো হয়েছে ৩.৫৪। ওই ডিগ্রির সনদে তার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়েছে ১১০১০৮০৪৩১। তবে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির গ্রীন রোডের ওই ক্যাম্পাসের কোনো বৈধতা নেই বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে।

আব্দুল্লাহ আল কুতুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ,  আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই ডিগ্রি ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে অভিযুক্ত কুতুবের অর্জিত সার্টিফিকেটে উল্লেখিত রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটের ফলাফল অংশে বসালে সেটি ইনভ্যালিড (অবৈধ) দেখায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মো. আব্দুল্লাহ আল কুতুব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার পেছনে কিছু শত্রু লেগেছে। তারা চায় না আমি ভালো করি। আমি আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে সিএসই বিভাগ থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা নেই।

আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভুয়া সার্টিফিকেট

 

এদিকে ইউজিসি বলছে, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির গ্রীন রোডস্থ ক্যাম্পাসের বৈধতা নেই। এখান থেকে কেউ ডিগ্রি নিয়েছে এমন দাবি করলে সেটি ভিত্তিহীন। কেননা যে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই সেখান থেকে অর্জিত সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ অনেক পুরোনো। আমরা অনেকবার এই বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। এখানকার সার্টিফিকেটের কোনো মূল্য নেই। এখান থেকে নেয়া সনদের বৈধতা নেই। এই সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষক হওয়া জাতির জন্য ক্ষতিকর হবে। বিষয়টি এনটিআরসিএর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,  প্রার্থীর সনদ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ এনটিআরসিএ করে না। আমরা প্রার্থীদের সুপারিশ করে থাকি। কেউ যদি জাল সনদ জমা দেয় তাহলে যে প্রতিষ্ঠানে সে সুপারিশ প্রাপ্ত হবে সেখানে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের সময় তার ভুয়া সনদের বিষয়টি ধরা পড়বে।

আমরা অনেক সময় অনেক কাজ করতে পারি না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ইউজিসি অথবা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি আমাদের বলা হয় যে তার অর্জিত সার্টিফিকেটটি ভুয়া তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। প্রয়োজনে শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ বাতিল পূর্বক তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ