‘তোরে খায়া ফালবাম’ ভূমি কর্মকর্তাকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সরকারি জমি দখল করা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে (নাইব) হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কাছারি বাড়ির জমিতে রাতারাতি দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ করায় অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেয়ার সময় ভূমি কর্মকর্তাকে ‘তোরে দেইক্কা ছাড়বাম, তোরে খায়া ফালবাম, আমি গ্র্যাজুয়েট, কামডা তুই বালা করলি না' বলে হুমকি দেন ছাত্রলীগের সাবেক ওই নেতা।
জানা গেছে, উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের মধুপুর বাজারে ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয়। সরকারি চার শতক জমিতে রয়েছে কার্যালয়টি। কাছারি বাড়ি নামে রেকর্ডভুক্ত হওয়া জমির পাশে অল্প পরিমাণে জমি কেনেন মো. শামীম আল নঈম নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি ইউনিয়টির ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। নিজের কেনা জমির পাশে ইউনিয়ন কাছারির জমি থাকায় সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন শামীম। কয়েক মাস আগে নিজের বাসার সেফটিক ট্যাংক স্থাপন করেন সরকারি জমিতে। ওই সময় তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মানবিক দৃষ্টিতে সেটি উচ্ছেদ করেননি। গত কিছুদিন ধরে লকডাউন চলায় কর্মস্থলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা না থাকার সুযোগে কাছারি বাড়ির চার শতক জমির মধ্যে অন্তত ২ শতক জমি দখল করে দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। গত শুক্রবার মধ্যরাতে খবর পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেন শামীমকে। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করে রাতে বেলায় ভবন নির্মাণের কাজ করে ফেলা হয়।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাছারির জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় সোমবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনামিকা নজরুল অভিযান চালিয়ে নির্মিতব্য ভবনটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে দেন। সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে উচ্ছেদ অভিযান। তারপরেও কিছু অংশ এখনও ভাঙার বাকি রয়েছে। ভবন ভাঙায় হুমকি দেওয়া হয়েছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নাইব) মো. আজিজুল হককে। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নাইব) মো. আজিজুল হক বলেন, দল করার ক্ষমতা দেখিয়ে কাছারির জমিতে জোরপূর্বক ভবন নির্মাণ করেছেন। লকডাউনে তিনি অফিসে না থাকার সুযোগে এই কাজ করা হয়েছে। এখন উচ্ছেদ করায় তাকে দেখে নেওয়াসহ হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
অভিযুক্ত শামীম আল নঈম বলেন, তিনি নিজের ক্রয়কৃত জমিতে ভবন নির্মাণ করছিলেন। কিন্তু নাইব দেড় লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তার কাছে। না দেওয়ায় অন্যায়ভাবে তার ভবন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি হত্যার কোনো হুমকি দেননি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকারি জমি দখল করে ভবন করা হচ্ছিল। সরকারি জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত চলার পর হুমকি দেওয়ায় দু'টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাইব বাদী মামলাটি করবেন।