ছাত্রীর সঙ্গে মিথ্যা বিয়ে, ফেসবুকে বার্তায় পুলিশের ব্যবস্থা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন এক যুবক। পরে ওই যুবকের কয়েক বন্ধুর উপস্থিতিতে হুজুর ডেকে তাকে বিয়ে করেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রিহীন এ বিয়ের কিছুদিন পর অন্য মেয়ের সঙ্গে স্বামীর সম্পর্কের বিষয়ে টের পান ওই ছাত্রী।
একপর্যায়ে বিয়ে অস্বীকার করেন তার স্বামী। এ নিয়ে স্বামীর পরিবারের কাছ থেকে কোনো স্বীকৃতি না পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজে বার্তা দিয়ে সহায়তা চান ওই ছাত্রীর বোন।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা জানান, পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পরিচালিত ফেসবুক পেজের ওই বার্তা পেয়ে স্বামীর পরিবারের স্বীকৃতি আদায় ও আনুষ্ঠানিক বিয়ের ব্যবস্থা করে পুলিশ। পরে ওই ছাত্রীকে নিপীড়ন করে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়েরের পর স্বামী ও পরিবারের লোকদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সম্পর্কের এক পর্যায়ে ওই যুবকের কয়েকজন বন্ধুর উপস্থিতিতে তারা বিয়ে করে ফেলেন। তবে এটি কোনো স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য বিয়ে ছিল না, এক মৌলভী ডেকে এনে তার মাধ্যমে বিয়ে পড়ানো হয়। ধর্মমতে এটাই বিয়ে বিশ্বাস করে নেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
জানা যায়, ওই যুবকের চলাফেরায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর সন্দেহ হয়। তিনি বুঝতে পারেন অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন যুবকটি। ভুক্তভোগী ছাত্রী চ্যালেঞ্জ করলে অস্বীকার করেন ওই যুবক। একপর্যায়ে বড় বোন বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইনবক্সে তার ছোট বোনের জন্য সহযোগিতা চেয়ে বার্তা পাঠান। মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স সেই বার্তা পেয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুকুল আলমকে বার্তাটি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবারকে সেদিনই থানায় ডাকেন ওসি। যোগাযোগ করা হয় ছেলেটি ও তার পরিবারের সঙ্গে। পুলিশি ও আইনি ঝামেলা এড়াতে লোকটির পরিবার মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আনুষ্ঠানিক বিয়ে আয়োজনের প্রস্তাব দেয়। উভয় পক্ষের সম্মতিতে এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কয়েক দিনের মধ্যেই একটি সম্মানজনক দেনমোহর ধার্য করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
কিছুদিন পর ইনবক্সে আবারও বার্তা, মেয়েটির সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভালো আচরণ করছে না। তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। একপর্যায়ে তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। বার্তাটি ওসি খিলগাঁওকে পাঠিয়ে পুনরায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং।
খিলগাঁও থানার ওসি ঘটনাস্থলে একটি মোবাইল টিম পাঠিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে তার শ্বশুরবাড়িতে তুলে দেয়। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে মেয়েটির স্বামী এবং অন্য অভিযুক্তরা বাড়ি ছেড়ে আগেই পালিয়ে যান। মেয়েটির নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি মোবাইল টিম বাড়ির সামনে অবস্থান করে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর কাছ থেকে একটি অভিযোগ গ্রহণ করা হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।