অতিরিক্ত সচিবের আক্ষেপ

আমরা কি সবাই ফেরেশতা! চামড়া কেন এত পাতলা আমাদের!

  © ফাইল ফটো

লকডাউনে চিকিৎসকের সাথে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বাকবিতণ্ডার ঘটনার ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে আক্ষেপ জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবির।

মাহবুব কবির মিলন নামের ভেরিভায়েড ফেসবুক একাউন্টে সোমবার রাতে এক স্ট্যাটাসে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ঘটনাটির ভিডিও না হলে কিন্তু কেউ কিছুই জানত না, কিছুই হত না। এরকম কত কিছুই তো ঘটে যাচ্ছে আমাদের জীবনে। সব ভিডিও করা হলে তো সুইসাইড করা ছাড়া কারো উপায় থাকত না। আমরা কি সবাই ফেরেশতা!! চামড়া কেন এত পাতলা আমাদের!!’

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের আগে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকাকালে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে আলোচনায় আসেন মাহবুব কবির মিলন। বর্তমানে তিনি ওএসডি হিসেবে রয়েছেন। লকডাউনে রোববারের ঘটনা নিয়ে তাঁর পুরো ফেসবুক স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে দেওয়া হল:

‘বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনাকে আর না টানি, প্লিজ। অনাকাঙ্ক্ষিত এবং বিব্রতকর একটি মুহূর্ত যাদের নিয়ে, তাঁরা কিন্তু জীবনের অনেক ক্ষেত্রে হয়ত অনেক মানবিক। অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, অনেকের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়েছেন, অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন। এঁরাই কিন্তু আমাদের ভাই, আমাদের বোন। এত জাজমেন্টাল না হয়ে ভুলে যাই সবকিছু। সহমর্মিতা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ আর ভালবাসা নিয়ে মিটিয়ে ফেলি বিরোধ আর জিঘাংসা।
পারভারশনের অতল গভীরে নিমজ্জিত আজ আমরা সবাই।

বাচ্চারা কি শিখবে আমাদের থেকে আজ!! কি শিখাচ্ছি আমরা তাদের!!

বুকে হাত দিয়ে কেউ বলতে পারবেন, দেশের কোনো পেশার মানুষের কাছ থেকে ক্ষতির চেয়ে অনেক অনেক বেশি উপকৃত হননি!! তাহলে এত পেশা বিদ্বেষ কেন সবার মনে!!

ঘটনাটির ভিডিও না হলে কিন্তু কেউ কিছুই জানত না, কিছুই হত না। এরকম কত কিছুই তো ঘটে যাচ্ছে আমাদের জীবনে। সব ভিডিও করা হলে তো সুইসাইড করা ছাড়া কারো উপায় থাকত না। আমরা কি সবাই ফেরেশতা!! চামড়া কেন এত পাতলা আমাদের!!

কিছুই হয়নি। ডাক্তার, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট সবাই ভাল। অনেক ভাল রেকর্ড আছে তাঁদের। টেম্পার বা আচরণ পদ্ধতির সমস্যার কারণে হয়ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল পরিস্থিতি। আর কিছু না।

এই মাটিতে যত খারাপ কাজ হয়, অসংখ্য ভাল মানুষ এবং তাদের ভাল কাজ না থাকলে মাটি অনেক আগেই ধ্বসে যেত।
মুক্তিযুদ্ধার সন্তান পরিচয় দেয়ার অর্থ হচ্ছে, আমি মিথ্যা বলছি না বা অনিয়ম করছি না। আসলে সেটাই হওয়া উচিৎ।
এই মহান বিষয়টিকে আর খাটো না করি, ভাইরাল সাবজেক্ট করে ঝাঁপিয়ে না পড়ি!

বর্তমানে কোভিড প্যানডেমিক নিয়ে ভয়াবহ বিপদে আছি আমরা। এর মাঝে জাতিগতভাবে পরনিন্দা, জিঘাংসা, গীবতের চর্চা ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনবে হয়ত আমাদের জীবনে।

প্লিজ, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম, আমাদের সন্তানদের জন্য ভাল কিছু রেখে যাই আমরা।’


সর্বশেষ সংবাদ