ভিডিওটি যেখান থেকে শুরু, ঘটনার শুরু তারও আগে: ডা. জেনি

  © ফাইল ফটো

লকডাউনে চিকিৎসকের সাথে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এবং এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বাকবিতণ্ডার ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ওই চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি।

ডা. জেনি বলেন, ‘ভিডিওটি যেখানে শুরু হয়েছে ঘটনার শুরু তারও আগে। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে উত্তেজিত করেছেন। আমাকে পাপিয়া, পাপিয়া বলে অপবাদ দিয়েছেন। অথচ এখন আমিই ভিলেন। সবখানে আমার সমালোচনা হচ্ছে।’

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. জেনি আরও বলেন, ‘আমি বিএসএমএমইউতে সকাল ৮টা থেকে ডিউটি শুরু করি। দুপুরে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম। পুরোটা সময় পিপিই পরা ছিল। বাসায় ফেরার সময় মানসিকতাটা কেমন থাকবে, আপনিই বলেন। ওই অবস্থায় গাড়ি আটকানো হলো। আমার কাছে মুভমেন্ট পাস চাওয়া হলো। তাদের বলি, আমি ডাক্তার এবং ডিউটি করে এসেছি। তখন তারা আইডি কার্ড দেখতে চাইলে বলি, আমি আইডি কার্ড আনতে ভুলে গেছি। তখন তারা বলেন, আইডি কার্ড দেখাতেই হবে। তখন আমি গাড়ি থেকে নেমে এলাম। শরীরে অ্যাপ্রন ছিল। অ্যাপ্রনে বিএসএমএমইউর লোগো ছিল। গাড়ি থেকে নেমে আমি আমার গাড়িতে লাগানো স্টিকার দেখাই। স্টিকারে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র ছিল। সেটাতে আমার ছবিও ছিল। আমি বারবার দেখানোর পর ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, আমরা এগুলো দেখতে রাজি নই। আইডি কার্ড দেখান।’

ডা. সাঈদা শওকত জেনি বলেন, ‘অনেক প্রমাণ দেওয়ার পরও তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। তখন আমি উত্তেজিত হই এবং গাড়িতে গিয়ে বসি। ম্যাজিস্ট্রেট তখন আমার গাড়ির সামনে এসে গাড়ি সাইডে নিতে বলেন। তর্কের একপর্যায়ে আমি শুনলাম পাপিয়া পাপিয়া বলা হলো। তখন আমি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ি। তাদের প্রত্যেকের আচরণ প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। অথচ যে আংশিক ভিডিও ছাড়া হলো তাতে আমার ভূমিকাগুলোই দেখানো হলো। নারী ও মাদককারবারির সঙ্গে জড়িত কুখ্যাত পাপিয়ার সঙ্গে আমাকে তুলনা করা হয়েছে। এটা কোনো কথা! আমি মেনে নিতে পারছি না। এর ন্যায়বিচার চাই।’

ডা. সাঈদা শওকত জেনি ওই সংবাদমাধ্যমদে বলেন, “ভিডিওটি খেয়াল করলে বুঝবেন, আমি বারবার ‘আমরা, আমরা’ বলেছি। আমি আমার নিজের কথা বলিনি। গোটা ডাক্তার সমাজের ভোগান্তির কথা বলেছি। চলমান করোনাযুদ্ধে মোট ১৩০ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। ১৩০ পরিবার এতিম হয়েছে। অথচ এখন আমরা ভিলেন।”

রোববার দুপুরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালে বিএসএমএমইউয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের চেকে পড়েন। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন অফিসের সহকারী কমিশনার শেখ মো. মামুনুর রশিদ আদালত পরিচালনা করছিলেন। নিউ মার্কেট থানার একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে একাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন।

চেক পোস্টে পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসকের কাছে তার আইডি কার্ড দেখতে চান। সঙ্গে আইডি কার্ড আনেননি বলে জানান চিকিৎসক জেনি। এরপর তার কাছে মুভমেন্ট পাস দেখতে চাওয়া হয়। এ সময় জেনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা জেলা প্রশাসন অফিসের সহকারী কমিশনার শেখ মো. মামুনুর রশিদ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ডা. জেনির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

সহকারী কমিশনার শেখ মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘চিকিৎসকদের ভুয়া অ্যাপ্রন লাগিয়ে অনেকেই রাস্তায় বের হয়েছেন। তার আইডি কার্ড নাই, সেটা ভালোভাবে বললেই আমরা ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তিনি পুলিশের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তাতে রীতিমতো অবাক হয়েছি। তারপরও চেষ্টা করেছি বিষয়টি সামাল দিতে।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. মামুনুর রশিদ আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় আমরা সবাই যুদ্ধ করছি। এমন পরিস্থিতিতে যদি ফ্রন্টলাইনে থাকা ডাক্তার, প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিক— নিজেরা যদি এভাবে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি তাহলে সাধারণ মানুষ কী ভাববে? সবার উচিত রাগ সামলে নিজেকে কন্ট্রোল করা।’


সর্বশেষ সংবাদ