নুসরাত হত্যার ২ বছর, ভাত দিতে না পারার যন্ত্রণায় কাতর মা
দুই বছর আগে আজকের দিনে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালে থাকার সময় মেয়ে পানি ও ভাত খেতে চেয়েছিল। আমি ডাক্তারদের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। ডাক্তাররা আমাকে পানি ও ভাত দিতে নিষেধ করেন। বলেন, ওর শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। পানি ও ভাত খাওয়ানো যাবে না।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমি দুইটা বছর যখন ভাত খেতে যাই, আমার নুসরাতের কথা মনে পড়ে। আমার মেয়ে ভাত, পানি খেয়ে যেতে পারে নাই। আমি এখন ভাত না বিষ খাচ্ছি, সেটা বুঝতে পারি না। আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়ে মারল।’
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।
রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানালেন নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আজ দুই বছর আমি আমার মেয়ের মা ডাক শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না। মেয়ের আগুনে পোড়া শরীরটা চোখে ভাসে। মেয়ে আমার মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। এরপর তো মরেই গেল।’
২০১৯ সালে ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন বোরকা পরা পাঁচজন। ৮ এপ্রিল তাঁর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।