মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস করে ২৩ কোটির মালিক চিকিৎসক দম্পতি

প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্তি ডা. মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন আহমেদ প্রধান ও তার স্ত্রী ডা. সোহেলী জামান
প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্তি ডা. মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন আহমেদ প্রধান ও তার স্ত্রী ডা. সোহেলী জামান  © সংগৃহীত

কোচিং সেন্টারের আড়ালে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন চিকিৎসক দম্পতি ডা. মুহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন আহমেদ প্রধান ও তার স্ত্রী ডা. সোহেলী জামান। তাদের ৪৮টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২৩ কোটি টাকা লেনদেনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এখন তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁস মামলার পাশাপাশি মানি লন্ডারিং মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত বছর থেকে ময়েজ উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। তবে তার স্ত্রী সোহেলী নিজ বাসাতেই আছেন। সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, তারা দুজন ছাড়াও আরও অন্তত ১৫ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ময়েজ উদ্দিনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি হিসাব ও এফডিআর পাওয়া যায়। এসব হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ১৯ কোটি ১৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা জমা করেছেন। এর মধ্যে ১৮ কোটি ১৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। তার নামে রাজাবাজারে বাড়িরও সন্ধান মিলেছে।

পাশাপাশি তার স্ত্রী সোহেলীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৯টি হিসাব ও এফডিআর পাওয়া গেছে। এসব হিসাবে তিনি তিন কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা জমা করেন। তবে এরমধ্যে তিন কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ময়েজকে গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তার স্ত্রীর ব্যাংক লেনদেনও। অন্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তদন্ত শেষে চার্জশিট দেওয়া হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।’

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম সদস্য ডা. ময়েজ। চক্রের অন্যতম প্রধান হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু’র সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্ক তার। পারভেজ, সানোয়ার, দিপুসহ চক্রের কয়েকজন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে এ চিকিৎসক দম্পতির নাম বলেছেন। এরপর তারা ময়েজের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন। তবে তা আগেই আত্মগোপনে চলে যান ময়েজ।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ময়েজ মূলত চোখের ডাক্তার। জসিম ও তার পরিবারের সদস্যরা চোখের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসায় ময়েজের কাছে গেলে তাদের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ২০০৬ সাল থেকে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রশ্ন ফাঁস শুরু করেন তারা। চিকিৎসার পাশাপাশি ফেইম নামে একটি মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার চালাতেন ময়েজ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করাই ছিল তার কাজ। স্ত্রী সোহেলী জামানও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

তবে এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউশনে কর্মরত ডা. সোহেলী জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা, আমার কোনও অর্থ নেই। আমার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ময়েজ অর্থ লেনদেন করেছেন। আমি এর সঙ্গে জড়িত না।’


সর্বশেষ সংবাদ