পুলিশি ‘নির্যাতনে’ স্নাতকের ছাত্রের মৃত্যু, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ এলাকাবাসীর
বরিশালে ডিবি পুলিশের ‘নির্যাতনে’ রেজাউল করিম রেজা (৩০) নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইন মহাবিদ্যালয়ের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। তাকে কারাগারে পাঠানোর আগে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নির্যাতন করে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের। এর প্রতিবাদে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। এ সময় অভিযুক্ত এসআইয়ের বাড়িতেও হামলা চালান তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। নিহত রেজাউল নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হামিদ খান সড়কের ব্যবসায়ী ইউনুছ মুন্সীর ছেলে। গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি গত মঙ্গলবার বাসার সামনে থেকে তাকে আটক করেন। পরে রাত ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় গাঁজা ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, গত বুধবার রেজাউল করিমকে কারাগারে গ্রহণ করা হয়। সেখানে তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ থাকায় এবং পা থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার তাকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ সিকদার বলেন, রক্তক্ষরণজনিত কারণে পুরুষ সার্জারি-১ ইউনিটে তাকে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে পরদিন রাতে তিনি মারা যান।
এদিকে ‘নির্যাতনকারী’ পুলিশ সদস্যদের বিচার চেয়ে রবিবার বিকেলে সাগরদী এলাকায় মহাসড়কে রেজাউলের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। এতে মহাসড়কে কয়েকশ’ যানবাহন আটকা পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন। পরে এসআই মহিউদ্দিন মাহির বাসভবনে ভাঙচুর চালান তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
রেজাউলের পিতা ইউনুছ মুন্সী দাবি করেন, তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর শুক্রবার রাতে পুলিশ ফোন করে জানায় রেজাউল বাথরুমে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তার সঙ্গে পরিবারের কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে দাবি করে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই মহিউদ্দিন মাহি গণমাধ্যমকে বলেছেন, গাঁজা ও নেশাজাতীয় ইনজেকশনসহ রেজাউলকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন সুস্থ অবস্থায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগেও মাদক মামলা ছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে ই-মেইল বার্তায় ওই ছাত্রে মৃত্যুর ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, নিহত রেজাউল পূর্ব থেকেই এলাকায় মাদকবিক্রেতা ও মাদকসেবী হিসেবে চিহ্নিত ছিল এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিল। তার বাম পায়ের কুঁচকিতে ক্ষত ছিল। ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো কিছুই করা হয়নি।
এর পরেও বিষয়টি তদন্তের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনারকে (দক্ষিণ) প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, নিহতের পরিবারের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।