১১ মাসে ১০৯ ছাত্রী ধর্ষণের শিকার, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ আটটি
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১০৯ জন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে আট জন। ১৩টি জাতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। তবে গণমাধ্যমের অগোচরে অনেক সংবাদ চাপা পড়ে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সে হিসেবে প্রকৃত আরও বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত জানুয়ারিতে দুই সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ ১৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে দুই সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ ৯ জন, মার্চে এক সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ চার জন, এপ্রিলে তিন জন, মে-তে পাঁচ জন, জুনে তিন জন, জুলাইয়ে এক সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ ১১ জন, আগস্টে এক সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ আট জন, সেপ্টেম্বরে পাঁচ জন, অক্টোবরে ৩৪ জন, নভেম্বরে এক সংঘবদ্ধ ধর্ষণ সহ ১০ জন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। মোট হিসেব করলে আট সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৯ জন।
সার্বিক হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ মাসে ৯৯৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২২৬ জন। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন। আর ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুধু নভেম্বর মাসে ৩৫৩ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর ১৮ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ মোট ১৫৩ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দেশের ১৩টি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত খবরের আলোকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এছাড়াও অসংখ্য নারী ও শিশু নির্যাতনের কথা লোকচক্ষুর অন্তরালে ঢেকে যায় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এরকম পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের বিকল্প কোনো সমাধান হতে পারে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা।
তিনি বলেন, ৯০-এর দশকে নারীরা বেশি এসিড দগ্ধ হতো! সামাজিকভাবে সোচ্চার এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তা অনেকেটা কমে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে নির্যাতন বিভিন্ন রুপ ধারণ করেছে। ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ছেলে শিশুদের বলাৎকার, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া সামাজিক সচেতনতা, শিক্ষার প্রসার, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব দূরীকরণ এবং অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার চাইতে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ নির্যাতন কমে যাবে। এর মাধ্যমে একটি ধর্ষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।
সমাজবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আরো বলেন, শিশুরা পরিবারের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। শারীরিক নির্যাতনের চাইতে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় বেশি। একজন শিশু সন্তানের সাথে আরেক সন্তানের তুলনা করলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুদের সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব অভিভাবককে যথাযথভাবে পালন করা উচিত।
এসময় মাদ্রাসায় যারা শিশুদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে ছেলে সন্তান ধর্ষণ বা বলাৎকারের হার কমে যাবে বলেও মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী।