পিবিআই নোটিশের জবাবে ঢাবি ছাত্রীর শাস্তি চাইলেন নুর
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ‘দুশ্চরিত্রহীন’ বলার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলায় জবাব দিতে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে নোটিশ পাঠায় সাইবার ট্রাইবুনাল আদালত। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করায় তাদের কাছে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন নুরুল হক নুর। সেখানে ওই ছাত্রীর শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) নুরুল হক নুর সশরীরে হাজির হওয়ার পাশাপাশি পিবিআইতে লিখিত বক্তব্য জমা দেন। বিষয়টি বুধবার সন্ধ্যায় নুর নিজেই দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন।
পিবিআইতে জমা দেয়া লিখিত বক্তবে নুর বলেছেন, ‘‘দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র নির্বাচনে নির্বাচিত সহসভাপতি। যথেষ্ট সুনামের সাথে এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি রক্ষা করে ছাত্র তথা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অধিকার আদায়ে সামনের সারিতে থেকে ভূমিকা রেখে চলেছি। স্বাভাবিক কারণে আমার অনেক প্রতিপক্ষ রয়েছে এবং অনেকেই আমার ক্ষতির অপচেষ্টায় লিপ্ত।’’
ডাকসু ভিপি বলেন ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে একটি চক্র বেশ অনেকদিন যাবত হয়রানি করার মানসে লিপ্ত রয়েছে। ইতিপূর্বে একই অভিযোগকারিনী লালবাগ এবং কোতোয়ালী থানায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের সহযোগী এবং অপহরণের অভিযোগে দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেগুলোর এখনও তদন্ত সমাপ্ত হয়নি। এই অবস্থায় পুনরায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির উদ্দেশ্যেই বর্তমান মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।’’
নুর বলেন, অভিযোগকারিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার একটি ভিডিওর বরাতে আমাকে হয়রানির চেষ্টায় ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মনগড়া, আইন বহির্ভূত, সরকারি এবং রাষ্ট্র বিরোধী অসত্য, অর্থহীন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য কোন কারণ ছাড়াই নিজেকে ভাইরাল করার জন্য প্রায়শই প্রকাশ করে থাকে’ বলে যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কাল্পনিক । আমি সমসাময়িক বিষয়ে বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং অধিকার আদায়ে ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দিয়ে থাকি, যা সর্বমহলে প্রশংসিত এবং গ্রহণীয় হয়ে থাকে।’’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘মামলায় উল্লেখিত ‘তার এহেন উস্কানিমূলক বক্তব্যগুলো আক্রমণাত্মক, বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ ও সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে প্রকাশ করে বাদিনী ও বাদিনীর পরিবারকে প্রতিবেশীদের সাথে বা সমাজের সাথে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করে সমাজে অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা করে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় এবং বাদিনীর সুনাম নষ্ট করে ও মানহানি করে’ মর্মে করা অভিযোগসমূহ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটনা ঘটেনি এবং ঘটার মত কারণও উদ্ভব হয়নি।’’
নুর আরও বলেন, গত ১১ অক্টোবর আমার ‘Nurul Haque Nur’ নামীয় ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তাকে 'দুশ্চরিত্রহীন' বলার অভিযোগ করছেন। একই ব্যক্তি কর্তৃক একের পর এক মিথ্যা মামলা করার প্রেক্ষিতে ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর রয়েছে বোঝাতে এবং অভিযোগকারিনীর অভিযোগ যে ভিত্তিহীন-বানোয়াট তা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে উপস্থাপনের জন্যই মূলত ঐ ভিডিও বক্তব্য প্রদান করা হয়। আমার উক্ত বক্তব্যের কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, মিথ্যা তথ্য কিংবা কারোর সুনাম নষ্টের কোন উপাদান নেই । বরং অভিযোগকারিনীই ধর্ষণে সহায়তা ও অপহরণের মত ভয়ংকর অপরাধের সাথে আমাকে মিথ্যা- উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়িয়ে, একের পর এক মামলা করে সামাজিকভাবে আমাকে হেয় ও সন্মানহানী করেছে ।
ডাকসু ভিপি আরও বলেন, ‘‘অভিযোগকারিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হলেও আমার সাথে তার কখনোই সরাসরি সাক্ষাৎ বা পরিচয় হয়নি। সে মূলত একটি মহলের প্ররোচনায় আমার রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, অযথা হয়রানি করতে এবং আমার সম্মানহানি করতেই এমন অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩ টি মামলা করেছেন। এমতাবস্থায় এই প্রকারের মিথ্যা মামলার অভিযোগ থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দিয়ে আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্মান বাঁচাতে ও অব্যাহত হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে সবিনয় আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ভিত্তিহীন, মিথ্যা মামলা করে হয়রানির কারণে অভিযোগকারিনীর বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা করছি।’’