বাসের ছাদে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ, পাঞ্জাবীওয়ালার সন্ধানে পুলিশ

  © টিডিসি ফটো

ড্রামের ভেতর থেকে প্রবাসীর স্ত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পাঞ্জাবীওয়ালা মাঝ বয়সী যুবককে খুঁজছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, বাসটিতে ড্রাম যে তুলেছে তাকে খুঁজে পেলেই পুরো হত্যা রহস্য উদঘাটন হবে। পাশাপাশি লাশ পরিবহনের সাথে বাস মালিক বা শ্রমিকরা কেউ জড়িত আছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে গড়িয়ারপার স্ট্যান্ডে লাশভর্তি ড্রামটি তোলার সময়ে পাঞ্জাবী পরিহিত যুবক কন্ডাক্ট্ররের সাথে ভাড়া নিয়ে দরকষাকষিও করেন। এমনকি ড্রামটি আস্তে ধরে উঠাতে এবং নামাতে হবে বলে নির্দেশনা দেন। পাঞ্জাবীওয়ালা ব্যাক্তিটি কারও সন্দেহের বাইরে থাকতে ড্রামের ভেতর কাঁচের জিনিস রয়েছে বলে বাস শ্রমিকদের বলেন।

জানা গেছে, ২৩০ টাকা ভাড়ায় সাবিনা বেগমের লাশ ড্রামে ভরে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে নেয়া হয়। ড্রামটি পৌঁছানোর পর ভ্যান আনার কথা বলে সটকে পরে ড্রামটির সাথে থাকা ৪৫ বছর বয়সী পাঞ্জাবী পরিহিত ব্যক্তি ও তার সহযোগী।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় আরসি পরিবহনের পিএস নামের একটি বাস নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ভুরঘাটার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। পথিমধ্যে নগরীর গড়িয়ারপার কাউন্টার থেকে দুইজন ব্যাক্তি কাচের তৈজস ভর্তি একটি ড্রাম গাড়িতে ওঠায়। নির্ধারিত ভাড়া ২৫০ টাকা হলেও দরকষাকষি করে ওই দুই ব্যক্তি ২৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভুরঘাটার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

স্থানীয়রা জানান, ৪৫ বছর বয়সী পাঞ্জাবী পরিহিত ব্যক্তিটি বাসের ইঞ্জিন কভারের উপর বসা ছিলেনি। ধারণা করা হচ্ছে যে দুজনে ড্রামে ভরে লাশটি বহন করছিল; তারাই ওই নারীর ঘাতক। ভুরঘাটা পৌঁছানোর পর দুইব্যক্তি ভ্যান আনার কথা বলে বাস থেকে নামার পর আর ফিরে আসে না। অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পর বাসের স্টাফরা স্থানীয়দের সহায়তায় ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে বসে ড্রামটি খোলা হলে সেখানে নারীর লাশ দেখতে পান।

পরে রাত ১১টার দিকে গৌরনদী থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে শনিবার (২১ নভেম্বর) সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করে। এছাড়াও এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিহতের দেবর মনির হাওলাদার জানিয়েছেন, তার ভাই-ভাবীর মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার জন্য গৌরনদীর মাহিলাড়া এলাকার খালেক হাওলাদার বেশ কিছুদিন আগে ৪ লাখ টাকা দেয়। বিলম্ব হওয়ায় খালেক বিদেশে যেতে অসম্মতি জানালে সাবিনা সম্প্রতি তাকে (খালেক) দেড় লাখ টাকা ফেরত দেয়। শুক্রবার সকালে দুই সন্তান নিয়ে দিয়াসুরের বাড়ি আসে তার ভাবী। সকাল ১০টার দিকে ‘খালেক দেখা করতে ডেকেছে’ বলে বরিশাল যান।

সারাদিনেও সে বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়ে। ওই রাতে ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে একটি বাসের ছাদে ব্যারেলের মধ্য থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে তার ভাবীর লাশ শনাক্ত করেন মনির।

এ ঘটনায় ওই বাসের স্টাফদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি আফজাল হোসেন। তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে এবং জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

তিনি জানান, ওই নারীকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। নিহতের মাথার পিছনের দিকে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিক আলামতে এটা স্পষ্ট এটি হত্যাকান্ড। আমরা লাশ বহনকরী সেই ব্যাক্তিদের খুঁজছি। তাদের হদিস পেলেই পুরো রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, মৃত সাবিনা বেগম (৩০) বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুরের বাসিন্দা সাহেব আলীর মেয়ে এবং কুয়েত প্রবাসী শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। সে দুই শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে সে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দিয়াসুরে শ্বশুড় বাড়িতে আসেন। সেখানে শ্বাশুড়ির কাছে বাচ্চাদের রেখে তিনি বরিশালে যান। ওইদিন রাত ১১টার দিকে একটি বাসের ছাদে রাখা ড্রামের ভেতর থেকে সাবিনার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।


সর্বশেষ সংবাদ