১৬ নভেম্বর ২০২০, ১০:৫৭

‘পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব’, ইউএনওকে বললেন উপজেলা চেয়ারম্যান

আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস  © সংগৃহীত

আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। এছাড়াও সরকারি নথিপত্র হারিয়ে যাওয়া ও রাজস্ব তহবিলের ১৯টি চেক বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে আরেকটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় আদিতমারী থানায় দু’টি ডায়েরি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি সাইফুল ইসলাম।

আদিতমারীর ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন এরমধ্যে একটি জিডি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতায় চেয়ারম্যান নিজের অংশ দাবি করেন। তবে বিধি মোতাবেক তালিকা প্রস্তুত করতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বলা হলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে সভা থেকে বের হয়ে যান।

পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগত সহকারী হুমায়ুনকে সিসিটিভি ক্যামেরার বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। এর কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মন্তব্য করেন, ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেব। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’

থানায় অপর একটি ডায়রি করেন পরিষদের মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান। এতে বলা হয়, গত ১২ নভেম্বর অফিস শেষে বাড়িতে যান তিনি। পরে অফিসে গিয়ে পকেট গেট খোলা দেখতে পেয়ে চার সহকর্মীকে নিয়ে কাগজপত্র যাচাই করেন। এ সময় উপজেলা পরিষদের মাসিক সভার নথি, উপস্থিত হাজিরা, কর্মচারীদের হাজিরা খাতা ও বেশ কিছু সরকারি নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরে গত রোববার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ভাইস চেয়ারম্যানসহ পাঁচ জন সহকারীর উপস্থিতে চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস চেক বই দেখতে চেয়ে হাতে নেন। এসময় রাজস্ব তহবিলের সোনালী ব্যাংকের আদিতমারী শাখার ১৯টি চেক ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে নিজের কাছে রাখেন। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন ব্যয় পরিশোধের নিমিত্তে সেগুলো যৌথ স্বাক্ষরিত ছিল।

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমাকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, সে কারণে জিডি করা হয়েছে।’ চেকগুলোতে তার স্বাক্ষর ছিল না বলেও দাবি করেন তিনি। আর আদিতমারী থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জিডির কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে আদিতমারীর ইউএনওসহ ১৭ কর্মকর্তার দেয়া অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন। জেলার স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. রফিকুল ইসলাম সবার স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। গত রোববার এ প্রক্রিয়া চলার সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।