ঠিকাদারি না পাওয়ায় বিসিক শিল্প মালিককে ছাত্রলীগ পরিচয়ে মারধর
বরিশাল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরীর (বিসিক) উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি না পাওয়ায় স্থানীয় শিল্পমালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান ভাই শফিউল আজমেকে মারধর করেছেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে রইজ আহম্মেদ মান্না নামে এক ব্যক্তি। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন, স্থানীয়দের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় তাকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগা বরিশাল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরীতে ২০১৮ সালে অভ্যান্তরীন নিচু জমি ভরাট, সড়ক, নালা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। ওই বছর টেন্ডার আহবান করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজ করার জন্য পায়। তবে মারধরের ঘটনার পর থেকে বিসিকের উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে।
শিল্প মালিকরা দাবি করেছেন, টেন্ডার না করার জন্য বিসিসি মেয়রের লোকজন এসে বিসিক কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করেছিল। ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত রইজ আহম্মেদ মান্না টেন্ডার গুছিয়ে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিসিক কর্তৃপক্ষ সমঝোতায় টেন্ডার দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হন বিসিসি মেয়র।
এদিকে বিসিকের উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ার পরপরই কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাধা দেন রইজ আহম্মেদ মান্নার স্থানীয় অনুসারীরা। কিন্তু তারপরও কাজ বন্ধ না করায় দুই দফায় শিল্প মালিকদের মারধর করেন মান্না।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, গত ২০ অক্টোবর শিল্পমালিক হিমাদ্রি সাহাকে এবং ২৪ অক্টোবর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সামনে রইজ আহম্মেদ মান্না বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমানের ভাই শফিউল আজমেকে মারধর করেছেন।
এমনকি মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলেও রহস্যজনক কারনে মামলা নেয়নি কাউনিয়া থানার ওসি আজিমুল করিম। তবে ঘটনার বেশ কয়েকদিন পরে চাপের মুখে মামলা গ্রহণ করতে বাধ্য হন ওসি বলে জানা গেছে। এদিকে বিসিকে শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা কথিত এই ছাত্রলীগ নেতার আতঙ্কে রয়েছে।
যদিও অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে দাবি করেছেন রইজ আহম্মেদ মান্না। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শফিউল আজম স্থানীয়দের সাথে খারাপ আচরণ করছিলেন। তাই তাকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তাকে মারধর করিনি।
বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ জানিয়েছেন, বিসিক একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি মন্ত্রণালয়ের অধিন কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের নয়। কিন্তু বিসিকের নিচু জমি ভরাট কাজ শুরু করায় সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে ড্রেজার ও পাইপ নিয়ে গেছে। বিধানমত দেয়াল নির্মাণ শুরু করলেও নোটিশ দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় কর্মকর্তারা।
বিসিক শিল্পমালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমানের বলেন, শিল্প মালিকদের মারধর করে এবং উন্নয়ন কাজে একের পর এক বাধা দিয়ে আসছে রইজ আহমেদ মান্না। তার কারণে বিসিক শিল্প নগরী থমকে আছে।
এই শিল্প মালিক নেতা বলেন, মান্নার বাধার বিষয়ে আমি বারবার মেয়র মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তিনি নূন্যতম রেসপন্স করেননি। শেষে মেয়র মহোদয়ের শ্যালক মিলনকে জানিয়েছি এই টেন্ডারের কাজ শেষ হলে আরও ৫৪ কোটি টাকার কাজ আসবে। সেই কাজগুলো আপনারা নিয়েন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীক কাজে বাধা ও মারধরের শিকার হলে বরিশালে কোন ব্যবসায়ীই ব্যবসা করবে না।
অঞ্চল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনায় ১৯৬৭ সালে ১৩০ একর জমিতে যাত্রা শুরু করে বরিশাল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরী (বিসিক)। প্রতিষ্ঠার ৫২ বছর পরও এখনো ৩৭ একর জমি রয়ে গেছে ব্যবহারের অনুপযোগী। যদিও বর্তমানে ১৩৮টি ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। উদ্যোগ নিলে বিভাগীয় শহর বরিশালের শিল্প নগরী হতে পারে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মক্ষেত্রের একটি বিশাল এলাকা।