দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন শহিদুন্নবী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২০, ১০:১৪ PM , আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০, ১০:১৪ PM
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগ এনে যে ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন নবী জুয়েল চাকরি হারিয়ে উপার্জনপথ বন্ধ হয়ে গেলেও ধর্ম-কর্মে ছিলেন বেশ মনোযোগী। তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কোরআন-হাদিসও পাঠ করতেন।
নিহত ব্যক্তির ভাই তৌহিদুন্নবী জানান, জুয়েল এক কথায় সহজ আর সাদা মনের মানুষ ছিল। স্বভাবে ও একটু চঞ্চল। কিন্তু ইদানিং মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল সে। সকালে বেরিয়ে যেতো, কোথায় যেতো বলে যেতো না, ফোন ধরত না, অনেকদিন ধরে ঘরে বসে আছে, নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই। এ জন্যই হয়তো মানসিক চাপ ছিল। তবে সেটা গুরুতর কিছু না। এমনিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো।
জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ছিলেন। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন শরীফ অবমাননার গুজব থেকে জুয়েলকে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
জানা যায়, ২০১৬ সালে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চাকরি চলে যাওয়ায় তার একমাত্র উপার্জনপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতেন নিয়মিত। ষড়যন্ত্রে চাকরিটা চলে গেছে দাবি করে তারা জানান, এরপর জুয়েল অনেকটা ভেঙে পড়েছিল। ফলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।
জুয়েলের বোন হাছনা আক্তার নিতি বলেন, ষড়যন্ত্র করে জুয়েলকে কলেজের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করা হয়। এতে প্রচণ্ড রকমের মানসিক ধাক্কা পায়। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনযোগ দেয়। সে নিয়মিত কোরআন-হাদিসসহ ইসলামিক বই পড়তো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতো।
জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা বলেন, আমার স্বামী অনেক সহজ-সরল ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, কোরআন-হাদিস পড়তো। প্রত্যেক বছরই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিতো। করোনাভাইরাসের সময় কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছে। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি বিশ্বাস করি না সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে। যারা গুজব ছড়িয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।