সাইরেন বাজিয়ে এলাকায় ঢুকতেন ইরফান, বাধা পেলে মারধর

র‌্যাবের অভিযানের সময় গ্রেফতার ইরফান সেলিম
র‌্যাবের অভিযানের সময় গ্রেফতার ইরফান সেলিম  © ফাইল ফটো

দেহরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে দামি গাড়িতে করে পুলিশের মতো সাইরেন বাজিয়ে এলাকায় ঢুকতেন ইরফান সেলিম। তার আগমনে তটস্থ থাকত সাধারণ এলাকার সাধারণ মানুষ, পথচারীরা।

বহর নিয়ে ঢুকতে গিয়ে কোথাও কোনো বাধা পেলে তাঁর সঙ্গে থাকা অন্তত সাতজনের একটি দল যাকে-তাকে মারধর করত। মারধরের নেতৃত্বে থাকতো সেলিম বাবু, জাহিদ, দীপুসহ অন্যরা।

বাবা একজন সংসদ সদস্য আর নিজে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হয়ে মানুষকে মানুষ ভাবারও সময় ছিল না ইরফান সেলিমের।

নিজের বাসা ও অফিসকে তৈরি করেছিলেন অনেকটা দুর্গের মতো করে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করেন এমন ওয়াকিটকি, হাতকড়া, ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস পাওয়া যায়। মানুষকে ধরে এনে নির্যাতনের জন্য সেখানে গড়েছিলেন টর্চার সেল।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বরখাস্ত হওয়া এই কাউন্সিলর সম্পর্কে গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর এবং বাড়ি তল্লাশির পর র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দেওয়ার পর ইরফানকে গতকাল মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ আদেশ জারি করে।

মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে ইরফানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে চকবাজার থানায় দুটি মামলা করেছে র‌্যাব। তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।

ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলাটির তদন্ত ‘প্রভাবমুক্তভাবে’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এই মামলা প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করা হবে।’ গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘এখানে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা কেউ করবে না। একজন অপরাধীকে যেভাবে বিচারের আওতায় আনা দরকার, একইভাবে তাকেও আনা হবে।’

মঙ্গলবার সকালে পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় ঢুকতেই মানুষের মুখে মুখে একটা কথাই শোনা যাচ্ছিল, ‘পোলাডা বাপের মানসম্মান রাখতে পারল না।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী রজব আলী বলেন, ‘এমপি হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে এলাকায় দখলবাজির অভিযোগ থাকলেও এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন করছেন তিনি। তাঁর ছেলের অনেক কর্মকাণ্ড ভালো ছিলো। তবে সে যখন রাস্তা দিয়া দ্রুতগতিতে গাড়ি নিয়ে যায় তখন তার লোকজন রাস্তা ফাঁকা করে দিতে সবাইকে বাধ্য করে। কথা না শুনলে লোকজনকে তারা মারধর করে। টর্চার সেলে ধরে নিয়ে যেত।’

নিজের আঞ্চলিক স্বরেই এ বিষয়ে কথা বললেন রজব আলী।


সর্বশেষ সংবাদ